সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জাতিসংঘে ইমরান খানের ভাষনের পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ
অনুবাদকঃ এইচ এম হামিদুর রহমান৷
নাম ছাড়া কপি করা নিষেধ


————————————
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইয়াকানাবুদু ওয়া ইয়া কানাসতায়ীন

মি. প্রেসিডেন্ট। সম্মানিত সেক্রেটারি। ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।

আজ আমি বিশ্ব নেতাদের এই ফোরামে আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে সম্মানিত বোধ করছি যেখানে আমাদের বিশ্বের সমস্যাসমূহ আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

আমি অনেক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাই, তবে আজ শুধু চারটি নিয়ে আলোচনা করি।
এবং বিশেষকরে আমার দেশ কঠিন সময় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সত্ত্বেও আমি এই ফোরামে এসেছি । আমি হয়তো আসতামনা কিন্তু খুবই জরুরী সমস্যাগুলো বিশ্ববাসীর অবশ্যই জানা প্রয়োজন।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

প্রথমেই আমি শুরু করতে চাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে। অনেক নেতা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু মি. প্রেসিডেন্ট আমি তারা প্রকৃতপক্ষে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করছেন না। অনেক বিশ্বনেতা যারা এই বিষয়ে কিছু করতে চান তারাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। আমাদের অনেক আইডিয়া আছে। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, অর্থায়ন ছাড়া আইডিয়া শুধুমাত্র অবাস্তব কল্পনা।
পাকিস্তান, আমি আমার নিজ দেশের সম্পর্কে আপনাদের বলছি। পাকিস্তান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের একটি। আমরা আমাদের নদীসমূহের উপর নির্ভর করি। পাকিস্তান মূলত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের ৮০ ভাগ পানি আসে হিমবাহ (তুষারস্রোত) হতে, এসব হিমবাহ শুধুমাত্র পাকিস্তানের অংশ হতে নয় এমনকি ভারত হতেও, কারাকোরাম হিমবাহ, হিমালয় ও হিন্দুকুশ হিমবাহ হতে এবং এগুলো প্রবাহিত হয় বিপদজনক গতিতে। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের পর্বতসমূহে ৫০০০ হিমবাহ চিহ্নিত করেছি। আমরা সেখানে আশঙ্কা করছি বড় আকারের আকস্মিক বিপর্যয়ের।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

কেপি, পাকিস্তানের একটি রাজ্য যেখানে আমরা ৫ বছরে কয়েক বিলিয়ন গাছ লাগিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ১০ বিলিয়ন গাছ রোপন করা। কিন্তু একটি রাষ্ট্র একা কিছু করতে পারে না। এখানে প্রয়োজন বিশ্বের সমন্বিত উদ্যোগ।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

তবে আমি আশাবাদী যে, সর্বশক্তিমান আমাদের বড় একটি শক্তি দান করেছেন – সেটা হচ্ছে মানবসম্পদ। আমরা বড় ও মহৎ কিছু করতে পারি। এবং এখানে আমি আশাবাদী বৃহৎ ও ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘই নেতৃত্ব দিবে। ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই চাপ দিতে হবে। গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য ধনী দেশগুলোরই মূলত দায় বেশি। সুতরাং আমি অনুধাবন করি এই বিষয়ে জাতিসংঘই নেতৃত্ব দিবে।

আমি এখন ২য় যে ইস্যুটি নিয়ে বলতে চাই তা খুবই জটিল একটি বিষয়।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

মি.প্রেসিডেন্ট, প্রত্যেক বছর বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দরিদ্র দেশগুলো থেকে ধনী দেশগুলোতে প্রাচার হয়ে যাচ্ছে। মুদ্রা পাচার, কর ফাঁকি, পশ্চিমা দেশে বিলাসবহুল সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা এটা করছে। মি. প্রেসিডেন্ট, উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এটা ধ্বংসাত্মক। এর ফলে ক্রমশ ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর পার্থক্য আরো বাড়ছে। মাদক এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো মানি লন্ডারিংকে একইভাবে ট্রিট করা হচ্ছে না। বর্তমানে দরিদ্র দেশগুলোর সম্পদ তাদের এলিটরা লুট করে নিচ্ছে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

যখন আমি এক বছর পূর্বে আমার দেশের দায়িত্ব নিলাম, আমি দেখলাম গত ১০ বছরে আমাদের দেনার পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। সারা বছর আমরা যত রাজস্ব সংগ্রহ করি তার অর্ধেক ব্যয় হয়ে যায় দেনার দায় মিটাতে।

কিভাবে আমরা আমার ২২০ মিলিয়ন জনসংখ্যার ব্যয় নির্বাহ করবো যখন দেনা মিটাতে অর্ধেক অর্থ ব্যয় হয়ে যায়? আমরা দেখতে পাই, দুর্নীতিবাজ নেতাদের দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং এর সম্পত্তি পশ্চিমা পুঁজিতে বিনিয়োগকৃত। এটা উদ্ধার করা আমাদের জন্য অনেক কঠিন।

লুট করা অর্থ উদ্ধার করা গেলে আমরা মানব উন্নয়নে সেটা ব্যয় করতে পারতাম। কিন্তু আইন এসব অপরাধীদের রক্ষা করছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আইনজীবি নিয়োগ দেয়ার অর্থ আমাদের নেই।

আমাদের ধনী দেশগুলো হতে সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু মি. প্রেসিডেন্ট এটা খুব জটিল।

ধনী দেশগুলির অবশ্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। দরিদ্র দেশগুলো হতো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের পাচার তারা অনুমোদন দিতে পারে না। কিভাবে দরিদ্র দেশগুলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (SDG) অর্জন করবে যেখানে মানব উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ সহজেই আমাদের দেশসমূহ হতে পাচার হয়ে যাচ্ছে?

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

ক্ষমতাশীল এলিটদের বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রাচার করতে সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। আমি বুঝতে পারি না, কেন ট্যাক্স হেভেন অনুমোদিত। (ট্যাক্স হেভেন হলো এমন দেশে যারা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের খুবই কম ট্যাক্সে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে)। মি. প্রেসিডেন্ট, কেন এই ট্যাক্স হেভেন? কেন এটা অনুমোদিত? কেন গোপন হিসাব?
বিশ্বে পরিবর্তন হচ্ছে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে এবং ধনী হচ্ছে আরো ধনী। এটা বড় একটি সংকট তৈরি করবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিকে অবশ্যই এসব লুটপাট বন্ধ করার একটি উপায় বের করতে হবে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

আমার তৃতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে ইসলামোফোবিয়া। বিশ্বে ১.৩ বিলিয়ন মুসলমানের বাস। মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলমান ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করছে। ৯/১১ এর পর হতে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি বিপদজনক। এটি বিভাজন সৃষ্টি করছে।

মুসলিম নারীর হিজাব পরিধান করাকে সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। হিজাবকে দেখা হচ্ছে অস্ত্র হিসেবে। কিছু দেশে নারীর পোশাক খোলার স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু পোশাক পরিধান করার স্বাধীনতা নেই! এটা কেন ঘটছে? ইসলাম ফোবিয়ার কারণে এমনটা ঘটছে। এটা কখন শুরু হয়েছে? ৯/১১ এর পর ইসলাম ফোবিয়া শুরু হয়েছে। কেন? কারণ, কিছু পশ্চিমা নেতা সন্ত্রাসবাদ আর ইসলামকে এক করে দেখেন। যেমন : ইসলামি সন্ত্রাসবাদ, র‌্যাডিকাল ইসলাম (মৌলবাদী ইসলাম)। র‌্যাডিকাল ইসলাম কী? ইসলাম তো কেবল একটাই। আমরা তো কেবল হযরত মুহাম্মদ সা.-এর ইসলামের অনুসরণ করি। এ ছাড়া আর কোন ইসলাম নেই। ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও র‌্যাডিকাল বলে তারা মানু্ষের কাছে কী মেসেজ দিতে চায়? কিভাবে তারা মডারেট মুসলিম আর র‌্যাডিকেল মুসলিম এর মাঝে পার্থক্য করে? সন্ত্রাসের সাথে কোনো ধর্মেরই কোনো সম্পর্ক নেই।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

বিদেশ ভ্রমণ এর সময় আমরা মুসলমানরা ইসলামোফোবিয়ার শিকার হই এবং ইউরোপিয়ান দেশসমূহে মুসলিম কমিউনিটিকে একঘরে করে রাখার প্রবণতা দেখা হচ্ছে। এসব প্রান্তিকতাই জন্ম দিচ্ছে চরমপন্থার।

আমাদের অবশ্যই এই ইস্যুটি স্পষ্ট করতে হবে। ইসলাম র‌্যাডিকাল নয়, তেমনি ইহুদি, খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মও র‌্যাডিকাল নয়। কোনো ধর্মই র‌্যাডিকালিজম (মৌলবাদ) প্রচার করে না। সকল ধর্মের ভিত্তি হলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ন্যায়পরায়ণতা, যা মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

দুঃখজনকভাবে মুসলিম নেতারা র‌্যাডিকালিজম নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। কারণ তারা মডারেট হতে চান। মডারেট হওয়ার জন্য অনেকে পশ্চিমা পোশাক পরেন এবং এমনকি ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও মডারেট হওয়ার জন্য ইংরেজিতে কথা বলেন।

সুইসাইড এট্যাককে ইসলামের সাথে একীভূত করে দেখা হয়, অথচ ৯/১১ এর আগে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সুইসাইড এট্যাক করেছিল তামিল টাইগাররা। তারা হিন্দু। এজন্য কেউ হিন্দু ধর্মকে দোষারোপ করে না। হিন্দু ধর্মের সাথে সুইসাইড এটাককে মিলানো হয় না।

আমি পশ্চিমে ক্রিকেট খেলেছি, অনেক সময় ব্যয় করেছি এখানে এবং এখানকার মানুষের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে আমার জানা আছে। তাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রচলিত। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইসলামোফোবিয়া। ১৯৮৯ সালে আমাদের রাসূল (সাঃ) কে অপবাদ দিয়ে, উপহাস করে অবমাননকার বই প্রকাশ করা হয়। এবং তখন মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ওয়েস্টার্ন দেশগুলো সমস্যা কোথায় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের চোখে ইসলাম একটি অসহিষ্ঞু ধর্ম। এবং প্রতি ২-৩ বৎসর পর পর কেউ একজন আমাদের নবীকে (সাঃ) অবমাননা করে, মুসলমানরা প্রতিক্রিয়া দেখায় আর পশ্চিমে মুসলমানরা অসহিষ্ঞু হিসেবে পরিচিত পায়। এজন্য পশ্চিমের গুটিকয়েক লোক দায়ী যাদের আচরণ মুসলমানদের বিক্ষুব্ধ করে। কিন্তু পশ্চিমের অধিকাংশ লোক সেটা বুঝতে পারে না।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

মুসলিম নেতৃবৃন্দের ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে, হযরত মুহাম্মদ সা. আমাদের কী বার্তা দিয়েছেন? নবী (সা.) স্বর্গীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের সাক্ষ্যদাতা। পবিত্র কুরআন হচ্ছে সেই মহাগ্রন্থ যা মুসলমানদের জীবনের চলার পথনির্দেশনা। কুরআন আমাদের কী নির্দেশনা দিয়েছেন সে বিষয়ে নবী (সাঃ) ছিলেন জীবন্ত উদাহরণ। সুতরাং তিনিই ছিলেন আদর্শ যাঁকে আমরা অনুসরণ করতে পারি। হযরত মুহাম্মদ সা. মদিনায় আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই রাষ্ট্রের প্রকৃতি কেমন ছিল? ইসলামের একটি বিষয় আমাকে খুব আন্দোলিত করে। অভিযোগ করা হয় ইসলাম নারী ও সংখ্যালঘু বিরোধী, কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্রের সূচনার প্রথম দিনই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইসলামি রাষ্ট্র দুর্বল, বিধবা, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল, দরিদ্রদের জন্য ট্যাক্স সংরক্ষণ করেছিল। রাষ্ট্র ঘোষণা করেচিল সকল আদম সন্তান সমান তাদের গায়ের রং যাই হোক না কেন। মুহাম্মাদ সা. ঘোষণা করেছিলেন দাসদের সাথে পরিবারের সদস্যদের মতো আচরণ করতে। ফলে মুসলিম বিশ্বে এমন কিছু ঘটেছিল, যা অন্যান্য সভ্যতায় ঘটেনি। মুসলিম বিশ্বে দাস রাজ বংশের আবির্ভাব ঘটেছিল। দাসরা রাজা হয়েছিলেন। মামলুক দাসরা মিশর শাসন করেছিল। ভারতে দাসরা শাসন করেছিল।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

সংখ্যালঘুর প্রশ্নে সকল ধর্মের উপসনালয়কে নিরাপত্তা দেয়া ইসলাম পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে দেখে। ইসলাম ঘোষণা করেছে সকল মানুষ সমান। ইসলামের চতূর্থ খলিফা যিনি ছিলেন তখন মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান, তিনি একজন ইহুদির বিরুদ্ধে আদালতের রায়ে হেরে গিয়েছিলেন। আইনের উধে্‌র্ব কেউ নয়।

মি. প্রেসিডেন্ট, যদি কোনো মুসলিম কমিউনিটি সংখ্যালঘুর উপর অন্যায় করে তবে সেটা আমাদের ইসলামের শিক্ষার বিপরীত। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সবাইকে বুঝতে হবে যে, রাসূল সা. আমাদের হৃদয়ে সমাসীন। যখন তাকে অবমাননা করা হয়, তখন আমাদের হৃদয়ে আঘাত লাগে। আর প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন হৃদয়ের আঘাত খুবই ভয়ানক। তাই যখন রাসূল সা.-কে অবমাননা করা হয় তখন মুসলিমরা প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু পশ্চিমারা এটা বুঝতে পারে না।

আমি টিনএজ বয়সে ইংল্যান্ড থাকতে দেখেছি যীশুখৃস্টকে নিয়ে কমেডি ছবি নির্মাণ করতে। এটা আমাদের মুসলিম সমাজে অকল্পনীয় বিষয়। যে সকল বিষয় অন্য মানুষদের হৃদয়ে আঘাত করে সেসব আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

পশ্চিমা সমাজে হলোকাস্টকে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি ইহুদী কমিউনিটিকে আঘাত করেছে। আমরাও একই শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যাশা করি। আপনার বাকস্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে আমাদের পবিত্র নবীকে (সাঃ) অবমাননা করে আমাদের আঘাত করবেন না। এটাই আমরা সবাইকে বলতে চাই।

এবার আমার চতূর্থ পয়েন্ট। মি. প্রেসিডেন্ট, এটাই সবচাইতে জটিল বিষয় এবং বিশেষ করে এটার জন্যই আমার এখানে আসা। হ্যাঁ, এটি হচ্ছে কাশ্মীরে যা ঘটছে সে সম্পর্কে।

ক্ষমতায় আসার পর আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল পাকিস্তান হবে এমন দেশ যে শান্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান তার সময়ের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করেছে। আমাদের ৭০,০০০ লোক যুদ্ধে মারা গিয়েছে, আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার।

১৯৮০‘র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে পাকিস্তান পশ্চিমাদের সাথে কাজ করে। গেরিলা যোদ্ধা নামে খ্যাত মুজাহিদ বাহিনীকে পশ্চিমারা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন করেছিল এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সোভিয়েত তাদেরকে সন্ত্রাসী বলত, যেখানে আমেরিকানরা তাদের বলতো মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত আফগানিস্তান থেকে পলায়ন করে। আমেরিকা আফগানিস্তান ত্যাগ করে আর পাকিস্তানও মুজাহিদ গ্রুপকে ত্যাগ করে।

অতঃপর ৯/১১ আসলো। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তান যক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত হলো। কিন্তু আমরা এই যুদ্ধের জড়িত হইনি। কেন? কারণ পশ্চিমারা ও আমরা তাদের বিদেশী দখলদারদের বিরুদ্ধে জিহাদে তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু এবার আমেরিকা আফগান দখল করে বসে আর প্রত্যাশা করে, আমরা মুজাহিদদের বলব, তোমারা সন্ত্রাসী, তোমরা স্বাধীনতা সংগ্রামী না। এটা হাস্যকর। তাই পাকিস্তান নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছে, ধ্বংসলীলায় জড়ায়নি।

৭০,০০০ পাকিস্তানী নিহত হলো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অথচ ৯/১১ এর সাথে কোনো পাকিস্তানী জড়িত ছিলো না। তালেবান, আল কায়েদা আফগানিস্তানে তৈরি হয়েছে, পাকিস্তানে নয়। কিন্তু ৭০,০০০ পাকিস্তানী নিহত হয়েছে!

আমি জানি যে ভারত বলে আসছে আমাদের জঙ্গি সংগঠন আছে কিন্তু আমি জাতিসংঘ পর্যবেক্ষককে এসে দেখার আমন্ত্রণ জানাই। পাকিস্তানে কোনো জঙ্গি গ্রুপ থাকবে না এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।

ভারত প্রসঙ্গে বলি। ভারতের সাথে আমার উষ্ঞ সম্পর্কের কথা বলি। উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের সুবাদে ভারতে আমার অনেক ভক্ত অনুরাগী রয়েছে, ভারতে আমার অনেক প্রিয় বন্ধু রয়েছে। আমার ভারত ভ্রমণ করতে সবসময় পছন্দ করি।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷
সুতরাং আমার দল ক্ষমতায় আসার পর আমার প্রথম উদ্যোগ ছিল ভারতের সাথে। নরেন্দ্র মোদীকে বললাম, আমাদের সমস্যাগুলি একই। আসুন আমরা একসাথে কাজ করি। দারিদ্র,জলবায়ুর প্ররিবর্তনে একসাথে কাজ করি। বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে আমরা সম্পর্কন্নোয়নে কাজ করি। কিন্তু উনি প্রতিউত্তরে বললেন, পাকিস্থান সবসময় আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আমি বলি, আমাদের সমস্যা একই। ঠিক একইভাবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর কলভূষণ যাদভ ধৃত হয়েছেন। সে স্বীকারও করেছে যে, সে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর হয়ে কাজ করছিল। কিন্তু আসুন আমরা সেসব বিরোধপূর্ণ বিষয় পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাই শান্তির জন্যে। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জনগণের স্বার্থ। কিন্তু মোদী তা মানল না। সে আমাদের সাথে সকল সংলাপ বাতিল করল।

ভারত নির্যাতিত কাশ্মীরে ২০ বছর বয়ষ্ক এক ছেলে আত্মঘাতি বোমা হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য হত্যা করল। মোদী তাৎক্ষণিকভাবে দোষ চাপালেন পাকিস্থানের উপর। আমি বললাম, আপনি একটা প্রমান দেখান যে, পাকিস্থান এটায় জড়িত,তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করব। পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ দেখানোর পরিবর্তে তারা পাকিস্থানের উপর বিমান হামলা চালালেন। আমরাও বদলা নিলাম এবং আমাদের শক্তি দেখিয়ে দিলাম। আমরা তাদের যুদ্ধ বিমানও ভূপাতিত করেছি এবং তাদের পাইলটকেও জীবিত আটক করেছি, কিন্তু সৌজন্যতা,উদারতার খাতিরে দ্রুত তাকে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছি। এটা আমাদের উদারতা,দূর্বলতা নয়। আর মোদী আপনি বিমান হামলা চালিয়ে আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছেন। আপনি আমাদের ১০টি গাছ ধ্বংস করেছেন। আমরা আবহাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি,কাজ করছি, আপনি সেখানে আমাদের ১০টি গাছ বিনা কারনে বিমান থেকে বোমা বর্ষনে ধ্বংস করেছেন। এটা আমাদের একটা বিরাট ক্ষতি !

মোদি নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন যে, তিনি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটি ছিল ট্রেইলার, পূর্ণ মুভি পরে আসছে। আমরা ভাবলাম, এটা নির্বাচনে জেতার জন্য দেয়া বক্তৃতা। নির্বাচনের পর আমরা স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাবো। কিন্তু বিষয়টি তা ছিলো না।
নির্বাচনের পর আমরা বুঝতে পারি অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ভারত FATF কালো তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৭০ নং আর্টিকেল তারা বাতিল করলো। কাশ্মীরে প্রচুর সেনা সমাবেশ করলো। এখন কাশ্মীরে মোট সেনার পরিমাণ ৯০০,০০০। এর মাধ্যমে ৮ মিলিয়ন লোকের উপর কারফিউ জারি করা হলো।

মি. প্রেসিডেন্ট একজন লোক কিভাবে এটা করতে পারে! এটা বুঝার জন্য আপনাকে জানতে হবে আরএসএস সম্পর্কে। আমি আরএসএস সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে চাই। মি. নরেন্দ্র মোদি আরএসএস এর আজীবন সদস্য। আরএসএস এমন একটি সংগঠন যেটি এডলফ হিটলার এবং মুসোলিনীর হিংস্র আদর্শে অনুপ্রাণিত। নাৎসীরা যে পদ্ধতিতে অন্য সকল জাতি হতে নিজেদের সেরা ভাবতো একই ভাবে আরএসএসও নিজেদের সবার চেয়ে সেরা মনে করে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

আরএসএস ভারত হতে মুসলমানদের জাতিগত নিধনে বিশ্বাসী। এটা সবাই জানে, আরএসএস হিন্দুত্ববাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। তারা মুসলিম ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। তারা বিশ্বাস করে মুসলিম শাসনের ফলে হিন্দুত্ববাদের সোনালী যুগের অবসান ঘটেছে। তারা সরাসরি মুসলিম ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। এটা সবাই জানে। গুগল করে আপনি জানতে পারবেন আরএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা গোলকওয়ার। এই ঘৃণার আদর্শ ১৯৪৮ সালে হত্যা করেছে ভারতের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীকে।

এই ঘৃণার আদর্শ আরএসএস এর গুন্ডাাদেরকে মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ মুসলিমকে জবাই করতে প্রেরণা দিয়েছিল। মোদির নির্দেশে গেরুয়া পাঞ্জাবী পরে ৩ দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিছিল আরএসএস এর সন্ত্রাসীরা। তাদের তান্ডবে ২০০০ মুসলিম নিহত হয় এবং গৃহহীন হয় ১৫০,০০০ মুসলিম। কংগ্রেস পার্টি বিবৃতি দিয়েছিল আরএসএস এর ক্যাম্পসমূহে সন্ত্রাসীরা রয়েছে। মোদী তখন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে আমেরিকা ভ্রমণ করতে পারেন নি।

৮ মিলিয়ন লোককে বন্দী করে রাখছে! এটা কেমন মানসিকাতা! সেখানো নারী শিশু অসুস্থ মানুষ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব কী ভাবছে? ৮ মিলিয়ন পশু বন্দী? তারা মানব সন্তান।

জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের উগ্র চিন্তাধারা নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপিকে অন্ধ করে দিয়েছে। যখন কারফিউ উঠে যাবে তখন কী ঘটবে তারা চিন্তা করছে?

গত তিরিশ বছরে কাশ্মীরে ১০০,০০০ নাগরিক নিহত হয়েছে, ১১০০০ নারী ধর্ষিতা হয়েছে। এটা জাতিসংঘের রিপোর্ট। কিন্তু বিশ্ববাসী কিছু করছে না। কারণ তারা দেখছে ভারত তাদের জন্য ১.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার বিশাল বাজার। বস্তুগত স্বার্থের কাছে বলি হচ্ছে মানবতা।

মোদি বলছে এটা কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যখন ৮ মিলিয়ন কাশ্মীরি বন্দীত্ব ভেঙ্গে ৯০০,০০০ সেন্যের মোকাবিলা করবে তখন কী ঘটবে? আমি আশঙ্কা করছি রক্তগঙ্গা বইবে।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

কাশ্মীরিদেরকে খাচাবন্দী পশুর মতো বাড়িতে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদেরকে এমনকি প্রো‌-ইন্ডিয়ানদের‌ও গ্রেফতার করা হয়। ১৩০০০ যুবককে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। যুবকদের ছড়রা গুলি দিয়ে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে আরো চরমপন্থা বাড়বে।
আমরা আশঙ্কা করছি আরো একটি পুল‌ওয়ামা ঘটনার। এবং যথারীতি ইন্ডিয়া দায়ী করবে পাকিস্তানকে।
ইন্ডিয়ান বিদেশ মন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে ৫০০ সন্ত্রাসী অপেক্ষা করছে। ৯০০,০০০ সৈন্যের বিরুদ্ধে ৫০০ সন্ত্রাসী কী করবে!
ইসলামিক টেররিজম টার্ম ব্যবহার করে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং কাশ্মীরীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে।

কেন তারা শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করছে? কারণ ভারতের হাতে বিকল্প নেই। কাশ্মীরে তাদের নিষ্ঠুরতার প্রতিক্রিয়ায় আরেকটি পুলাওয়ামার মতো ঘটনা ঘটবে এবং তারা আমাদের দায়ী করে আবার পাকিস্তানে বোমা মারার চেষ্টা করবে।

আপনারা কি মনে করেন না যে, কাশ্মীরে ৮ মিলিয়ন লোকের দুর্দশা ভারতের ১৮০ মিলিয়ন মুসলমানকেও চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে?

ইহূদী কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া কী হবে যখন মাত্র ৮০০০ ইহুদিকে বন্দী করা হবে? ইউরোপীয়ানরা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে? যেকোনো মানব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী হবে?

সময় এখন খুবই জটিল। কিছু ঘটলে পাকিস্তানকে দায়ী করা হবে। ইতোমধ্যে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি ফেব্রুয়ারি তে মুখোমুখি হয়েছিল। এজন্য জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে। ১৯৪৫ সালে এজন্যই প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ।

যদি আমরা পেছনে তাকাই, ১৯৩৯ সালে যখন মিউনিখ দখল করেছিল চেকোশ্লাভাকিয়া। বিশ্ব সম্প্রদায় ১.২ বিলিয়ন লোকের সমস্যা প্রশমনের জন্য কিছু করেছে? ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে? পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ প্রচলিত যুদ্ধে মুখোমুখি হলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এর পরিণতি হবে মারাত্মক।

একটি দেশ যে তার প্রতিবেশীর চেয়ে আয়তনে ৭গুণ ছোট, এমন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো যে, সে আত্মসমর্পণ করবে নাকি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে? আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করি। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।

এইচ এম হামিদুর রহমান৷

আমি পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছি না। এটি একটি আশঙ্কা। এটি জাতিসংঘের জন্য একটি পরীক্ষা। জাতিসংঘ‌ই কাশ্মীরের জনগণের নিজেদের পছন্দ বেছে নেয়ার অধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছিল। ১৯৩৯ সালের মতো এটা কি সঠিক সময় নয়?

এটাই সময়, পদক্ষেপ নেয়ার এটাই সঠিক সময়। এবং প্রথম একশন হবে ইন্ডিয়াকে অবশ্যই কাশ্মীরে হিউম্যান কারফিউ তুলে নিতে বাধ্য করা হবে যেটি গত ৫৫ দিন ধরে চলমান। ১৩,০০০ কাশ্মীরী বালককে মুক্ত করতে হবে।
কাশ্মীরের জনগণের আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠা করার এটাই উপযুক্ত সময় জাতিসংঘের জন্য। ধন্যবাদ।

 অনুবাদঃ এইচ এম হামিদুর রহমান৷

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আজকের ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজিনের এক জান্নাতি....

আলহামদুলিল্লাহ
আজকের ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজিনের
এক জান্নাতি পরিবেশের কর্মশালা শেষ হলো....

-আব্দুল আউয়াল শেরপুরী-


বাংলাদেশের আহলে হক ওলামায়েকেরামের
এত উপস্থীতি আমার জিবনের প্রথম দেখা.শুকরিয়া...

তবে বৃহত লক্ষ ও উদ্দেশ্য কে সামনে রেখে
সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে
রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশ

আজকের এ কর্মশালায়
উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করতেছি....

কারন এক সাথে এত আল্লাহ ওলাদের সোহবত পাওয়া
এক সাথে দ্বীনের দায়ীদের দেখে এবং ওয়ায়েজ দের করনীয় শীর্ষক আলোচনা থেকে সরসংসক্ষেপ নোট করতে পেরেছি.....
এটা আমার জিবনে পাথেয় হিসেবে কাজ করবে আমি মনে করি....

আজকের কিছু ঘোষনা.....

ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশের
আজ থেকে নতুন নাম মুরব্বীদের দিকনির্দেষনায়
রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশ

কমিটিতে আংশিক পরিবর্তন আনা হয়েছে নতুন নাম সমুহ.......

সভাপতি, আল্লামা আব্দুল বাসেত খান, সিরাজগঞ্জ।

সিনিয়র সহসভাপতি, মাওলানা লোকমান সাদী,হবিগঞ্জ।

সহসভাপতি,  মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, কুমিল্লা।
সহসভাপতি, মাওলানা ইসমাইল হোসেন সিরাজী,হবিগঞ্জ।

মহাসচিব, আল্লামা হাসান জামিল দাঃবাঃ
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামিদী,বি,বাড়ীয়া৷

যুগ্ম মহাসচিব, মাওলানা ইউসুফ বিন এনাম শিবপুরী,নরসিংদী।।

আল্লাহ পাক আমাদের আকাবীরীন হজরতের অসিলায় সারাবাংলাদেশের আলেমদের এক প্লাটফর্মে এসে দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 লিখেছেনঃ আব্দুল আউয়াল শেরপুরী

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ট্রাম্পের সভায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে ব্যাগে খাবার ভরলেন ভারতীয় নারী (ভিডিও)৷

ট্রাম্পের সভায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে ব্যাগে খাবার ভরলেন ভারতীয় নারী (ভিডিও)৷


যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে রোববার চলছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভা। এই সভার দিন হিউস্টনেরই একটি হোটেলে ঘটে এক লজ্জাজনক ঘটনা। এক ভারতীয় নারী তার ব্যাগে খাবার লুকাচ্ছিলেন, এর ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হোটেলের একটি টেবিলে খাচ্ছেন একজন পুরুষ ও একজন নারী। আশপাশের সবাই যখন খাবার খেতে ব্যস্ত, তখন আচমকাই ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠেছেন ওই নারী। প্লেট থেকে ধোকলা তুলে নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢোকান। এ সময় অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন তিনি। আশপাশের কেউ তার ওপর নজর রাখছে কি না তাও বারবার লক্ষ্য করেন তিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যামেরায় ধরা পড়ে যান।

বিদেশে বেড়াতে গিয়ে ভারতীয়দের এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটানোর উদাহরণ বহু আছে। গত জুলাই মাসেই ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটান এক ভারতীয় দম্পতি। হোটেলের ঘর থেকে শ্যাম্পু, সাবান, তোয়ালে, হেয়ার ড্রায়ার এমনকি পেন্টিং পর্যন্ত সুটকেসে ভরে রওনা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু, হোটেল থেকে বের হওয়ার মুখে কর্মীরা তাদের ব্যাগ পরীক্ষা করেন। সেই সময় ধরা পড়ে যান ওই দম্পতি।

মনোবিদরা বলছেন, কোথাও বেড়াতে গিয়ে নানা জিনিস চুরির বাতিক আসলে মানসিক রোগ। ক্লিপটোম্যানিয়া নামে ওই রোগে আক্রান্তরাই এমন কাণ্ড ঘটান।

সূত্র : আনন্দবাজার ও ইনকিলাব ডেস্ক৷

বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শুভ উদ্ভোধন হতে যাচ্ছে বাইশারীর তিতারপাড়াতে আধুনিক

আলহামদুলিল্লাহ্, শুভ উদ্ভোধন হতে যাচ্ছে বাইশারীর তিতারপাড়াতে আধুনিক আঙ্গিকে হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানাহ্৷
ছবিঃ নুতন নির্ধারিত স্থান

দ্বীনি প্রতিষ্ঠান শুভ উদ্ভোধন উপলক্ষে পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন, মোঃ শফি, আলহাজ মোঃ আব্দু শাকুর, মোঃ দুদু মিয়া সাবেক ইউপি সদস্য বাইশারী, মোঃ আব্দুল মালেক, মৌঃ দিল মোহাম্মাদ সাহেব প্রমুখ৷

প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাইশারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ক্যেয়ারটেকার ও বাইশারী শাহ্ নুরুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মৌলানা আব্দুল্লাহ্ দাঃ বাঃ৷

সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় ছিলেনঃ  বাইশারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ক্যেয়ারটেকার মৌলানা মোহাম্মাদ আলম মোজাহেরী দাঃ বাঃ ৷

এবং উক্ত পরামর্শ সভায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর দশজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়৷

প্রশংসা শোনার একটা মজা আছে

প্রশংসা শোনার একটা মজা আছে। নফস বারবার এর মজা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে
হাবিবুল্লাহ্ মিসবাহ রহিঃ 

কৃষক সিদ্ধান্ত নিল ঘোড়াটা বিক্রি করে দিবে। কোনো কাজে আসে না। সারাদিন বসে থাকে। কে জানে হয়তো মরেও যেতে পারে। এর চেয়ে এটাকে বিক্রি করে দেয়াই ভালো। কৃষক ঘোড়া নিয়ে গেল বাজারে। বিক্রি করার জন্য একজন দালাল ঠিক করলো। দালাল বাজারের মাঝখানে এসে ঘোষণা দিলো, একটা ঘোড়া আছে। খুব স্বাস্থবান। দিনে একবেলা খেতে দিলেই হয়, সারাদিন একটানা কাজ করে যেতে পারে। এর পিঠে যত ওজনের জিনিসই চাপানো হোক, আপত্তি করে না। এর গতি তুফানের মত।

কৃষক কিছুক্ষণ মন দিয়ে দালালের কথা শুনলো। এরপর বললো, ভাই থামো। এত ভালো ঘোড়া আমি বিক্রি করবো না।

-

গল্পটা রুপক। তবে আমাদের জীবনের সাথে মিলালে দেখি, গল্পের কৃষকের সাথে আমাদের খুব একটা তফাত নেই। সুধারণা থেকে মানুষ আমাদের নানারকম প্রশংসা করে। আমরা নিজের প্রকৃত অবস্থান ভুলে গিয়ে সেই প্রশংসায় মজে যাই। ভাবি সত্যি সত্যিই আমরা এমন।

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহিমাহুল্লাহ বলতেন, হে ইবনুল মুবারক, তুমি তো নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানো। এবার মানুষ তোমার সম্পর্কে যত প্রশংসাই করুক, তাতে তোমার ক্ষতি হবে না (অর্থাৎ, তুমি অহংকারী হয়ে উঠবে না)।

-

প্রশংসা শোনার একটা মজা আছে। নফস বারবার এর মজা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে ভেতরে মানুষের প্রশংসা শোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। এক পর্যায়ে প্রশংসা না শুনলে কষ্ট লাগে। আমলের ইখলাস চলে যায়, তার স্থান দখল করে রিয়া। তখন বান্দার বেশিরভাগ কাজই হয়ে উঠে অন্যকে দেখানোর জন্য।

সুফীরা বলতেন, মানুষ তোমার প্রশংসা করছে এই মানে এই নয় যে তুমি সত্যই এই প্রশংসার যোগ্য। তারা মূলত আল্লাহর সাত্তার গুনের প্রশংসা করছে, যে গুন দ্বারা আল্লাহ তোমার দোষত্রুটি ঢেকে রেখেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া বলেন, কোনো অন্তরে ইখলাস ও প্রশংসা শোনার আকাঙ্ক্ষা একত্রিত হতে পারে না।

ইমাম গাযালি বলেন, যে কারো অতিরিক্ত প্রশংসা করে সে কয়েকটি বিপদ টেনে আনে। প্রথমত, সে অতিরিক্ত প্রশংসা করতে গিয়ে মিথ্যা বলে। দ্বিতীয়ত, সে রিয়ার শিকার হয়। সে দেখাতে চায় প্রশংসিত ব্যক্তির প্রতি তার অনেক ভালোবাসা, কিন্তু হয়তো বাস্তবতা ভিন্ন। তৃতীয়ত, সে অন্যকে খুশী করার জন্য প্রশংসা করে। এবার সেই ব্যক্তি জালিম বা ফাসিক যাই হোক না কেন। অপরদিকে যার প্রশংসা করা হয় সেও দুটি সমস্যায় পড়ে যায়। এক, সে রিয়ায় আক্রান্ত হয়। দুই, সে নিজের অবস্থার উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যায়। পরে তার আমলে উন্নতি হয় না।

-

মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা মূলত প্রশংসিত ব্যক্তির বিপদ টেনে আনে।

একদিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে কারো ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনলেন। তিনি তখন বললেন, তুমি তো তাকে ধ্বংস করে দিয়েছো। তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছ। (মুসলিম, ৭৩৯৪)

-

অনলাইনের জগত প্রশংসা করা ও শোনার এক সহজ মাধ্যম। যারা অন্যের প্রশংসা করছি, যারা নিজের প্রশংসা শুনছি, আল্লাহ আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকার তাওফিক দিন। আমাদের মধ্যে পরিমিতিবোধ তৈরী করে দিন। জীবনের সকল কর্মে পরিমিতিবোধ এর পরিচয় দেয়ার তাওফিক দিন।