জনপ্রিয় পোস্টসমূহ দেখুন

রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯

ইয়াহুদী ইজরাঈলদের উপর আল্লহর গজব শুরু৷ ইসরাইল জুড়ে ভয়াবহ আগুন৷

ইসরাইল জুড়ে ভয়াবহ আগুন🔔🔔💊, নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু! 

ছবিঃ সংগৃহিত৷

মঠবাড়িয়ায় ইসলাম বিদ্বেষী ফেসবুক পোস্ট, আইসিটি মামলা মুসল্লিদের বিক্ষোভ।

মঠবাড়িয়ায় ইসলাম বিদ্বেষী ফেসবুক পোস্ট, আইসিটি মামলা
মুসল্লিদের বিক্ষোভ।
বিক্ষোভরত মুসল্লিদের ছবিঃ
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক যুবক তার নিজের ফেসবুক আইডিতে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি ও আপত্তিকর ছবি সংবলিত স্ট্যাটাস পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই যুবক দক্ষিণ বড়মাছুয়া গ্রামের দীপক মিত্র।

বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় দক্ষিণ বড়মাছুয়া গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারী অভিযুক্ত যুবক দিপক মিত্রকে আসামি করে ডিজিটাল আইন-২০১৯ এর ২৮/২ ধারায় থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এর আগে ওই স্ট্যাটাস দেখে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওই দিন আসর নামাজবাদ উপজেলার বড় মাছুয়া বাজার জামে মসজিদ থেকে ও শুক্রবার জুমার নামাজবাদ বেতমোড় ইউনিয়নের পাঁচটি মসজিদের মুসল্লিরা ইসলাম নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ চলাকালীন সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে আইনের আওতায় এনে শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র নাথ মিত্রর ছেলে দীপক মিত্র নামের এক যুবক গত মঙ্গলবার তার ফেসবুক আইডিতে ‘ভুল করেছে আল্লায়, শুধরে দিচ্ছে মোল্লায়। আল্লাহ যদি সর্ব শক্তিমান হতো, ইসলাম যদি সত্যি হতো, তাহলে মুসলিম বাচ্চারা খৎনাসহ জন্মগ্রহণ করতো’- এমন আপত্তিকর ফটোকমেন্ট পোস্ট দেয়। এতে সমস্ত মুসলিম জাতিকে ইসলাম ধর্মের অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই যুবককে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯

যেভাবে ভর্তি হবেন হাটহাজারী মাদরাসায়

যেভাবে ভর্তি হবেন হাটহাজারী মাদরাসায়

ছবিঃ হাটহাজারি মাদ্রাসা৷


এশিয়াখ্যাত উম্মুল মাদারীস দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় আগামি ১১ জুন মঙ্গলবার হতে সকল বিভাগ খোলা হবে। একই দিন থেকে নতুন ও পুরাতন ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানা যায়।
নিম্নে ভর্তিচ্ছুক নতুন ছাত্রদের নিয়মাবলি দেয়া হলো-
  • জামাতে “ইয়াযদাহুম” হতে “কানযুদ্দাকায়েক” জামাত পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা মৌখিক হবে।
  • “শরহে বেকায়া” জামাত হতে “দাওরায়ে হাদীস” পর্যন্ত পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা লিখিত হবে।
  • ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদনপত্র বিতরণ ৭ শাওয়াল, ১৪৪০ হিজরী।
  • আবেদনপত্র জমা দান ও ছবিযুক্ত প্রবেশপত্র বিতরণ ৯ শাওয়াল, ১৪৪০ হিজরী।
  • লিখিত ভর্তি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ: ১২ শাওয়াল ১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ১৬ জুন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ।
  • ভর্তি পরীক্ষার তিনদিনের মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রদের নাম প্রকাশ করে ভর্তি ফরম বিতরণ করা হবে।
  • শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্ররাই জামিয়ায় ভর্তির সুযোগ পাবে।
বি:দ্র: জামিয়ার সাথে সংযুক্ত মাদরাসাসমূহে হতে আগত ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের ভর্তির কার্যক্রম পূর্বের নিয়মেই সম্পন্ন করা হবে।
লিখিত পরীক্ষার বিবরণ:
১। দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) জামাতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের পরীক্ষা “মেশকাত এবং জালালাইন” কিতাব থেকে ৬ টি প্রশ্নের যে কোন ৩ টির উত্তর দিতে হবে।
২। “মেশকাত” জামাতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের পরীক্ষা “হেদায়া সম্পূর্ণ (এক থেকে-চার খণ্ড) কিতাব থেকে ৫ টি প্রশ্নের যে কোন ৩ টির উত্তর দিতে হবে।
৩। “হেদায়া আখেরাইন” জামাতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের পরীক্ষা “হেদায়া আওয়াল, সানী, মাকামাত, নুরুল আনওয়ার কিতাবুস সুন্নাহ” কিতাব থেকে ৫ টি প্রশ্নের যে কোন ৩ টির উত্তর দিতে হবে।
৪। “হেদায়া আওয়ালাইন” জামাতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের পরীক্ষা “শরহে বেকায়া, মুখতাসারুল মাআনী, নুরুল আনওয়ার কিতাবুল্লাহ” কিতাব থেকে ৫ টি প্রশ্নের যে কোন ৩ টির উত্তর দিতে হবে।
৫। “শরহে বেকায়া” জামাতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের পরীক্ষা “শরহে জামী-বাহসে ইসেম, কানযুদ্দাকায়েক, উসুলে শাশী, নফহাতুল আরব” কিতাব থেকে ৫ টি প্রশ্নের যে কোন ৩ টির উত্তর দিতে হবে।

জুমার নামাজে মাদক বিরোধী বয়ান, খতিবের দাড়ি ধরে ধরে টানা-হেঁচড়া

গাজীপুর প্রতিনিধি
  
২৫ মে ২০১৯ ০০:২৯ | আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০৯:১৭
জুমার নামাজের বয়ানে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে মুসল্লিদের উদ্দেশে তালিম দেওয়ায় গাজীপুরের একটি মসজিদের খতিবকে শারিরীকভাবে হেনস্থা করেছে মাদকসেবীরা। একই সঙ্গে ইমামের দাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করেছে তারা।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পিতবার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার পূর্ব নয়নপুর এলাকা থেকে ইসমাইল হোসেন (৩৫), জাকির (২২), মাসুদ (২৪), ইমরানসহ (২৫) নামে ছয় মাদকসেবীকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ১৭ মে সদর উপজেলার পূর্ব নয়নপুর এলাকায় পেপসি গেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি শামছুদ্দিন সাঈদ জুমার নামাজের পূর্বে মাদক, জুয়া ও নেশার বিরুদ্ধে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন। এতে এলাকার কতিপয় মাদকসেবী ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২১ মে ওই সমজিদের সামনে খতিব শামছুদ্দিন সাঈদকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে তাকে কিল-ঘুষি এবং দাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে।
জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত আলী জানান, এ সময় খতিবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে মাদকসেবীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পর দিন খতিব জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ইসমাইল, জাকির, মাসুদ, ইমরানসহ ছয়জনকে আটক করা হয় বলেও জানান এসআই শওকত।

শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯

ফরিদাবাদ মাদরাসায় ভর্তির নিয়ম,,,

ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তির নিয়ম,,, 
জেনে নিন, সঠিক শিক্ষা নিন,,, 

By HM Hamid

জামিয়ার ভর্তি জ্ঞাতব্য

আগামী ৭ই শাওয়াল সকাল ৭;০০ ঘটিকা থেকে ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ।
*সকাল ৭ থেকে ১১টা পর্যন্ত ফরম বিতরণ।

ভর্তি ফি-

কাফিয়া থেকে ইফতা পর্যন্তঃ
ভর্তির ফরম 50/-
ভর্তি ফি 2500/-
পত্রিকা ফি 150/-
খোরাকী 1200/-
*মোটঃ 3900/-
খুছুছী থেকে হেদায়তুন্নাহু পর্যন্তঃ
ভর্তির ফরম 50/-
ভর্তি ফি 2500/-
খোরাকী 1200/-
*মোটঃ 3750/-

কোটা খালী থাকা সাপেক্ষে ইফতায় ভর্তি হওয়ার জন্য দাওরায় মুমতাজ হওয়া শর্ত। জামিয়ার ছাত্রদের মুমতাজ অগ্রগণ্য।

দাওরা ভর্তির জন্য যে কোন বোর্ডের মেশকাত জামাতের মার্কসীট আনলেই হবে। গড় নাম্বার নূন্যতম 45 পেয়ে উত্তীর্ণ  হতে হবে।

বিঃ দ্রঃ এবার দাওরায় ভর্তি পরীক্ষা হবেনা। মেশকাতের মার্কসীট যথেষ্ট।

ইন্টারভিউ

★শরহে বেকায়া, জালালাইন ও মেশকাত জামাত ভর্তি পরীক্ষা মৌখিক হবে, যে সকল কিতাব পরীক্ষা হবে, নিম্নে দেয়া হলো-

#শরহে বেকায়া জামাতে ভর্তির জন্য 'শরহে জামী ও কানযুদ দাকাইক' কিতাব পরীক্ষা দিতে হবে।

#জালালাইনে ভর্তির জন্য 'শরহে বেকায়া' পরীক্ষা দিতে হবে।

#মেশকাতে ভর্তির জন্য 'জালালাইন' পরীক্ষা দিতে হবে।

★ খুসুসী থেকে শরহে জামী পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা লিখিত হবে।
পরীক্ষার সময়ঃ সকাল ১১ টা থেকে।
স্থানঃ মসজিদের দ্বিতীয় তলা।
যে সকল কিতাব পরীক্ষা দিতে হবে নিম্নে দেয়া হলোঃ-
#খুসুসী জামাতে ভর্তির জন্য,
"কুরআন শরীফ (নাযেরা), বাংলা, অংক।"
#মীযান জামাতে
'তাইসীরুল মুবতাদী, ফারসী কি পহলী, উর্দু কি তেসরী'।
#নাহবেমীর জামাতে_
'মীযানুস সরফ, আত্ ত্বরিকু ইলাল আরাবিয়্যা, বাকুরাতুল আদব'।
#হেদায়াতুন্নাহু জামাতে_
'নাহবেমীর, রওজাতুল আদব, পাঞ্জে গঞ্জ, ইলমুস সরফ'।
#কাফিয়া জামাতে_
'হেঃনাহু, ইলমুস সীগা'।
#শরহে_জামী
কাফিয়া, কুদূরী
যাতায়াত,
১. যেকোন জায়গা থেকে যাত্রাবাড়ি নেমে লেগুনা/বাসে পোস্তগোলা, সেখান থেকে রিকশা/লেগুনায় ফরিদাবাদ মাদরাসা।
২. যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে রিকশায় (৫০ টাকা নিবে হয়তো) ফরিদাবাদ মাদরাসা।
৩. যেকোন জায়গা থেকে সদরঘাট নেমে লেগুনা/রিকশা যোগে ফরিদাবাদ মাদরসা।

আপনার পরিচিত যেকোন মাদ্রাসার ভর্তির এলান করুন আমাদেরকে অবগত করে, 
যোগাযোগ করুনঃ এইচ এম হামিদুর রহমান +8801764022113 অথবা +8801829607456
#জাযাকুমুল্লাহ৷

মহিমান্বিত রজনী শবে-ক্বদর ও ই’তিকাফঃ

মহিমান্বিত রজনী শবে-ক্বদর ও ই’তিকাফঃ ফাযায়েল ও মাসায়েল
*হাফেজ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দাঃ বাঃ* 


শবে ক্বদরের তত্ত্ব ও মাহাত্ম্য

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইব্নে আবি হাতেম (রাহ্.) তাফ্সীরের ইমাম হযরত মুজাহিদ (রাহ্.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দিন সাহাবায়ে কিরামের বৈঠকে বনী ইসরাঈলের এক মুজাহিদের কথা উল্লেখ করেন। যিনি এক হাজার মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহ্র রাস্তায় লিপ্ত ছিলেন। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কিরাম আফসোস প্রকাশ করেন যে, এক হাজার মাস অর্থাৎ তিরাশি বছর চার মাস তো এ যুগে অনেকে জীবনও পায় না। তাই হযরত মূসা (আ.)এর উম্মতের মত এত অধিক সাওয়াব লাভের অবকাশও উম্মতে মুহাম্মদীর নেই। সাহাবায়ে কিরামের এ আফ্সোস অনুশোচনাকালে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহ্র পক্ষ হতে কুরআন মাজীদের সূরা ‘ক্বদর’ নিয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমন করেন। সে সূরায়ে ক্বদরে বলা হয় যে, লাইলাতুল ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ শবে ক্বদরের ইবাদত এক হাজার মাসের অবিশ্রান্ত ইবাদতের চেয়েও অধিক সাওয়াব রাখে। (বাইহাক্বী শরীফ, মাআরিফুল কুরআন)।

এ হাদীস হতে বুঝা যায় যে, শবে ক্বদরের মত এত নিয়ামতের রাত আল্লাহ্ তাআলা অন্য কোন উম্মতকে দান করেননি। তাই শবে ক্বদরের এ অফুরন্ত বরকতময় রাতের অনুসন্ধান প্রত্যেক মুসলমানদের কর্তব্য।

শাব্দিক ব্যাখ্যাঃ ক্বদরের এক অর্থ হল, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য। অফুরন্ত মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রেক্ষিতে এ রাতকে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বলা হয়। বিখ্যাত আলেম হযরত আবুবকর উররাক (রাহ্.) বলেন, এ রাতের ইবাদত-বন্দেগীর কল্যাণে একজন নগণ্য মানুষও আল্লাহ্র দৃষ্টিতে মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে।

ক্বদরের দ্বিতীয় অর্থ হল, তাক্বদীর ও হুকুম। সৃষ্টির প্রথম দিনে প্রত্যেক মানুষের ভাগ্যে যা কিছু লেখা থাকে, এক রমযান হতে অপর রমযান পর্যন্ত তার সরবরাহের হুকুম ও দায়-দায়িত্ব আল্লাহ্ তাআলা এ রাতেই ফেরেশ্তাদের দিয়ে দেন। হযরত ইব্নে আব্বাস (রাযি.)এর এক বর্ণনা মতে শা’বান মাসের ১৫তম রজনী অর্থাৎ শবে বরাতে আল্লাহ্ এক বছরের জন্য বান্দার রুযী-রিয্ক, হায়াত-মউত ও অন্যান্য তাক্বদীরী ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর শবে ক্বদরে সেসব সিদ্ধান্তের প্রয়োগ এবং রুযী-রিয্ক প্রভৃতি সরবরাহের দায়িত্ব আল্লাহ্ ফেরেশ্তাদের দিয়ে থাকেন। (কুরতুবী)।

শবে ক্বদর নির্ধারণ

ক্বদরের রাত নির্ধারণের ব্যাপারে উলামা ও ইমামগণের বহু উক্তি রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় উক্তি নিম্নে বর্ণিত হল-
(এক) ইমাম আবু হানিফা (রাহ্.)এর মতে শবে ক্বদর রমযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বছরের যে কোন রাতে তা হতে পারে। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে হযরত ইব্নে আব্বাস ও ইব্নে মাসঊদ (রাযি.) হতেও এ ধরনের উক্তি বর্ণিত আছে। আরিফে রব্বানী হযরত মুহিউদ্দীন ইব্নে আরবী (রাহ্.) বলেন, আমি শবে ক্বদরকে দুই বার রমযান শরীফে এবং দুই বার শা’বান মাসে প্রত্যক্ষ করেছি।

তাই আমার বিশ্বাস শবে ক্বদর বছরের বিভিন্ন মাসে ঘুরতে থাকে। (দুই) অধিকাংশ ইমাম বিশেষতঃ হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (রাহ্.)এর মতে এবং ইমাম আবু হানিফা (রাহ্.)এর অপর এক উক্তি মতে শবে ক্বদর রমযান মাসে হতে পারে। (তিন) ইমাম মালেক ও ইমাম আহ্মদ (রাহ্.)এর মতে রমযানের শেষ দশকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। (চার) প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা ইব্নে খুযাইমাহ্ (রাহ্.) এবং আরো অনেক আলেমের মতে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রজনীতে হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।

(পাঁচ) শাফেঈ মাযহাবের ইমামগণের মতে বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২১ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। (ছয়) তবে অধিকাংশ আলেমের মতে ২৭ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রাহ্.)এরও একটি উক্তি পাওয়া যায়। আল্লামা আইনী (রাহ্.) উমদাতুল ক্বারী নামক গ্রন্থে লিখেন, ২৭ তারিখের রাতে শবে ক্বদর হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমের উক্তি ঐক্যমত পাওয়া যায়। মোটকথা, শবে ক্বদর নির্ধারণে বিভিন্ন হাদীস থাকায় ইমামগণের বিভিন্ন উক্তি পরিলক্ষিত হয়। তবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হাদীস মতে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী দেখা যায়।

বুখারী শরীফের হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমযানের শেষ দশকে শবে ক্বদরের অনুসন্ধান কর। মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে, শবে ক্বদরকে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে অনুসন্ধান কর। বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭ তারিখের সম্ভাবনা বেশী। তদপ্রতি কতিপয় সাহাবীরও সমর্থন রয়েছে। এমন কি বুযুর্গ সাহাবী হযরত উবাই ইব্নে কা’ব (রাযি.) এ ব্যাপারে নিশ্চিত। সারকথা, শবে ক্বদরের মহান ফযীলতের রাতকে যথাসম্ভব গোটা রমযানে তালাশ করা উচিত। অর্থাৎ রমযানের প্রত্যেকটি রাত যদি যথাযথ ইবাদত ও তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হয়, তবে শবে ক্বদর অবশ্যই নসীব হবে বলে দৃঢ় আশা করা যায়। আর তা সম্ভব না হলে অন্ততঃ শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে যিক্র-আযকার, তাসবীহ্-তাহলীল, তিলাওয়াতে কুরআন, নফল নামায প্রভৃতির মাধ্যমে শবে ক্বদরের ফযীলত হাসিল করা যেতে পারে। আর কিছু না হলে অবশ্যই ঈশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করে নিলে শবে ক্বদর নসীব না হওয়ার আশঙ্কা নেই বল্লেই চলে। কারণ, হাদীস মতে ঈশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করা সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সমতুল্য। আর যদি বেজোড় রাতগুলো পূর্ণভাবে ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করার সুযোগ না হয়, তবে অন্ততঃ ২৭ তারিখের রাতের গুরুত্ব দেওয়া এবং পুরো রাত ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকা দরকার। (ক্বাযী খান, মাআরিফুস্ সুনান)।

গোপনীয়তার রহস্য

শবে ক্বদরের রাতকে গোপন রাখার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্র বিরাট হিকমত ও রহস্য। প্রত্যেক মূল্যবান বস্তু হাসিল করা যেমন কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তেমনি আল্লাহ্র উদ্দেশ্য হল এ মহামূল্যবান রাতের অনুসন্ধানে বান্দা সাধনা করুক। এক রাতের জন্য ত্রিশটি রাত জাগ্রত থাকুক।
আমরা দুনিয়ার কত তুচ্ছ জিনিসের জন্য কত রাতের নিদ্রা হারাম করে দিই। কিন্তু এক হাজার মাসেরও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন একটি রাতের জন্য কিছু কষ্ট স্বীকার করতে পারি না?

শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কিরাম শবে ক্বদরের গোপনীয়তার এ রহস্যও ব্যক্ত করেন যে, শবে ক্বদর যদি নির্দিষ্ট রাতে অনুষ্ঠিত হত এবং তা মানুষের জানা থাকত, তবে অনেক অলস ও গাফেল হতভাগ্য ব্যক্তি এমন একটি মহান রাতের মর্যাদা না দিয়ে আল্লাহ্র গযবে পতিত হত। হাদীস শরীফে আছে, এক দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে জনৈক সাহাবীকে নিদ্রাবস্থায় দেখেন। তিনি নিজে কিছু না বলে হযরত আলী (রাযি.)কে বলেন, লোকটিকে উঠিয়ে দাও। পরে সাহাবায়ে কিরাম হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রত্যেক নেক কাজে আপনাকে অগ্রবর্তী দেখি কিন্তু এখানে আপনি নিজে না বলে আলী (রাযি.)কে হুকুম দিলেন কেন? উত্তরে বলেন, আমি যদি তাকে ডাকি এবং এ সত্ত্বেও সে না উঠে তবে বড় অপরাধী হত।

তেমনি শবে ক্বদর গোপন থাকাও এক বড় নিয়ামত। শবে ক্বদর নির্দিষ্ট থাকলে কেউ জেনেশুনে যদি এর যথাযথ গুরুত্ব না দেয়, তবে আল্লাহ্র গযব হতে বাঁচার কোন উপায় থাকবে না।

শবে ক্বদরের ফযীলত

এর প্রধান ফযীলত সম্পর্কে কুরআন মাজীদে সূরাতুল ক্বদর-এ বর্ণিত আছে, এক হাজার মাস বা তিরাশি বছর চার মাস ইবাদতের চেয়ে সে এক রাতের ইবাদতের সাওয়াব অনেক বেশী। কত বেশী তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। দুই গুণ বা তিন গুণ বা দশ গুণ বা একশ’ গুণও হতে পারে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি শবে ক্বদরে দন্ডায়মান থাকে অর্থাৎ ইবাদত করে দ্বীনের হুকুম মনে করে এবং সাওয়াবের নিয়্যাতে, তবে তার অতীত গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। (বাইহাক্বী শরীফ)।

অপর হাদীসে আছে, ক্বদরের রাত্রে হযরত জিব্রাঈল (আ.) একদল ফেরেশ্তা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং প্রত্যেক সেই বান্দার জন্য দোয়া করেন যাকে নামাযে দন্ডায়মান বা অন্য কোন ইবাদতে নিয়োজিত দেখে। (মাআরিফুল হাদীস)। অন্য এক হাদীসে আছে, (রমযানের) এ মাসটি তোমাদের নিকট আসল। এ মাসে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত, সে সকল মঙ্গল হতে বঞ্চিত হল। (ইব্নে মাজাহ্)। অর্থাৎ এ রাতে যার ইবাদতের কোন অংশ নেই তার মত হতভাগ্যও আর কেউ নেই। শবে ক্বদরের মহত্ব এ একটি বিষয় হতেও পরিস্কার হয় যে, এ রাতেই কুরআন মাজীদ নাযিল হয়। তাই এ রাতের মর্যাদা অপরিসীম।

শবে ক্বদরের বিশেষ দোয়া

যরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.) একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, শবে ক্বদর যদি কখনও আমি পাই তবে কোন্ দোয়াটি আল্লাহ্র নিকট পাঠ করব? তিনি বল্লেন, এ দোয়াটি পাঠ করবেঃ “আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী”। অর্থঃ হে আল্লাহ্! আপনি অসীম ক্ষমাশীল, ক্ষমা আপনার পছন্দ। অতএব, আমার গুনাহ্ মাফ করুন। (তিরমিযী শরীফ, ইব্নে মাজাহ্ শরীফ)।

শবে ক্বদরের কতিপয় মাসায়েলঃ *মুফ্তিয়ে আযম আল্লামা মুফ্তী মুহাম্মদ শফী (রাহ্.) বলেন, এই পবিত্র রজনীকে শুধু জুলুস এবং ওয়ায মাহফিলে কাটিয়ে শুয়ে পড়া বড়ই অকল্যাণকর। ওয়ায মাহ্ফিল তো প্রত্যেক রাতে হতে পারে। ইবাদতের এই মূল্যবান সময়টি আর তো ফিরে আসে না। হ্যাঁ, যে সব ব্যক্তি সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করার হিম্মত করে, তারা রাতের প্রথম ভাগে কিছু ওয়ায-নসীহত শ্রবণ করে নফল ইবাদত, তাওবা-ইস্তিগফার এবং দোয়ায় লিপ্ত হতে পারে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্)।

শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কিরাম শবে ক্বদরের গোপনীয়তার এ রহস্যও ব্যক্ত করেন যে, শবে ক্বদর যদি নির্দিষ্ট রাতে অনুষ্ঠিত হত এবং তা মানুষের জানা থাকত, তবে অনেক অলস ও গাফেল হতভাগ্য ব্যক্তি এমন একটি মহান রাতের মর্যাদা না দিয়ে আল্লাহ্র গযবে পতিত হত।

* শবে ক্বদর ও শবে বরাতে অতিরিক্ত খানাপিনার আয়োজন করা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আর এই প্রচলন আমাদের সাল্ফে সালিহীনদের (পূর্বসুরীদের) মধ্যেও ছিল না। তবে আশুরার দিন অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা একটি হাদীস দ্বারা মুবাহ্ প্রমাণিত হতে পারে।

* যদি কেউ শবে ক্বদরের আলামত পেয়ে থাকে, তবে সে যেন তা পোগন রাখে এবং ইখলাসের সাথে ভাল করে দোয়া করে। (ফাত্ওয়ায়ে শামী)।

* শবে ক্বদর উপলক্ষ্যে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত কিংবা নামাযের কোন নির্ধারিত রাক্আতের উল্লেখ নেই। যতটুকু সম্ভব সারা রাত জাগ্রত থেকে নামায, বিশেষ করে সালাতুত্ তাসবীহ্, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল ও তাওবা-ইস্তিগফারে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করবে।

* শবে-ক্বদর একই ভাবে শবে-বরাতে মসজিদে কিংবা মাজারে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা এবং মাজারে-দরগাহে ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী। সুতরাং এই মোবারক রাতগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করতে এসব কু-প্রথা বর্জন করা এবং বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহ্র দরবারে দোয়া মুনাজাত করা দরকার।

ই’তিকাফঃ ফাযায়েল ও মাসায়েল

রমযানুল মুবারক বিশেষতঃ এর শেষ দশকের উৎকৃষ্ট আমলগুলোর একটি হল ই’তিকাফ। এর অর্থ দুনিয়ার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে শুধু আল্লাহ্র ধ্যানে তাঁর দরবারে (মসজিদে) বসে থাকা এবং সর্বদা তাঁর যিক্র-ফিক্র, তাসবীহ্-তাহ্লীলে রত থাকা। আল্লাহ্র মকবুল বান্দাগণের এ এক বিশেষ ইবাদত। এ ইবাদতের সময় হল মাহে রমযানের শেষ দশ দিন।

কুরআন নাযিল হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ‘হেরা’ গুহায় নির্জনতা অবলম্বন করতেন। বস্তুতঃ এ ছিল তাঁর প্রথম ই’তিকাফ। এর ফলে তিনি আধ্যাত্মিকতার সেই স্তরে পৌঁছেন যেখানে তাঁর প্রতি কুরআন নাযিল হয়। আর তা ছিল রমযানের শেষ দশকের ক্বদরের রাত্রে।

রমযানের পুরো মাসটি হল মানুষের পশু বৃত্তিকে দমন করে অত্মার উন্নতি সাধনের মাস। এ মাসে হারাম কাজ ত্যাগ করার কঠোর আদেশ তো আছেই, এমনকি রোযাবস্থায় অনেকগুলো হালাল কাজও ত্যাগ করতে হয়। এরপর অত্মার চরম উন্নতি লাভের জন্য এবং আল্লাহ্র সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শরীয়তে রয়েছে ই’তিকাফ ব্যবস্থা। বান্দা মসজিদের কোণে ই’তিকাফ নিয়ে দুনিয়ার সকল ঝামেলা ত্যাগ করে শুধু আল্লাহ্র ধ্যানে এবং তাঁর তাস্বীহ্-তাহ্লীলে মগ্ন থাকে। আর ক্ষণে ক্ষণে নিজের সকল অপরাধের মার্জনা উদ্দেশ্যে তাওবা ও ইস্তিগফার করে। রাতের অন্ধকারে চোখের জলে নিজের বুক ভাসায়। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ গ্রহণের বিশেষ ব্যবস্থা নিতেন। এমন কি কারণ বশতঃ এক বছর ই’তিকাফ নিতে অসমর্থ হলে পরবর্তী বছর মোট বিশ দিনের ই’তিকাফ নিয়েছিলেন।

ই’তিকাফের ফযীলত

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ নিতেন। ইন্তিকাল পর্যন্ত তাঁর এ আমল অব্যাহত ছিল। ইন্তিকালের পর তাঁর স্ত্রীগণ গুরুত্বের সাথে ই’তিকাফে বসতেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)।

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই’তিকাফ গ্রহণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, এরা (ই’তিকাফ উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থানের দরুণ) গুনাহ্ হতে বেঁচে আছে এবং সৎকর্মশীল লোকদের মত তার সৎকর্মের হিসাব চলতে থাকে। (ইব্নে মাজাহ্)। অর্থাৎ মানুষ যখন ই’তিকাফের নিয়্যাতে মসজিদে বন্দী থাকে, তখন সে তাসবীহ্ ও তিলাওয়াত প্রভৃতি দ্বারা যদিও অনেক নেকী লাভ করে, কিন্তু অনেক সময় আরো বড় নেকী লাভ হতে অপারগ থাকে। যেমন, সে পীড়িত লোকের দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে না, গরীব-মিসকীন, বিধবা ও এতিমের ফরিয়াদে সাড়া দিতে পারে না, মৃত ব্যক্তির জানাযা ও দাফন-কাফনে শামিল হতে পারে না। অথচ এই কাজগুলো বড় সাওয়াবের। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, ই’তিকাফ গ্রহণকারীর পক্ষে সকল কাজ সম্ভব না হলেও তার আমল নামায় সাওয়াবগুলো লেখা হয়।

হযরত আয়েশা (রাযি.) হতে বর্ণিত, রমযানের শেষ দশকের রাতগুলোয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনদেরও জাগ্রত রাখতেন আর কোমর বেঁধে ইবাদত-বন্দেগী করতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

অপর হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি মাহে রমযানের (শেষ) দশ দিনে ই’তিকাফ পালন করবে, তার এই আমল (সাওয়াবের ক্ষেত্রে) দুই হজ্ব এবং দুই উমরার সমতুল্য হবে। (তাবরানী, কানযুল উম্মাল)।

আরেকটি হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়্যাতে ই’তিকাফ নিবে, তার অতীত গুনাহ্ ক্ষমা করা হবে। (দায়লামী)।

ই’তিকাফের সংজ্ঞাঃ শরীয়তের পরিভাষায় ই’তিকাফ বলা হয়, ই’তিকাফের নিয়্যাতে পুরুষগণ মসজিদে এবং মহিলাগণ ঘরের মধ্যে নামাযের নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করা।

ই’তিকাফের আহ্কাম ও মাসায়েলঃ ই’তিকাফের জন্য তিনটি বিষয় আবশ্যকীয়। এক. পুরুষের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। সেই মসজিদে জুম্আ হোক বা না হোক কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় করা যাক বা না যাক। আফযল ই’তিকাফ মসজিদুল হারামের, এরপর মসজিদে নববীর, এরপর মসজিদে বাইতুল মুক্বাদ্দাসের, অতঃপর যেখানে মুসল্লীর সমাগম বেশী হয়। (ফাত্ওয়ায়ে শামী, ইল্মুল ফিক্বাহ্)। দুই. ই’তিকাফের নিয়্যাতে অবস্থান করা। তিন. হায়েয-নিফাস অথবা গোসল ফরয হওয়া অবস্থা হতে পবিত্র থাকা। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্)।

ই’তিকাফ তিন প্রকার

(১) ওয়াজিব ই’তিকাফ। মান্নত করলে ই’তিকাফ ওয়াজিব হয়। সেই মান্নত শর্তযুক্ত হোক বা শর্তহীন। ওয়াজিব ই’তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। (২) সুন্নাত ই’তিকাফ। রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ নেওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার কেউ ই’তিকাফ না নিলে সকলেই গুনাহ্গার হবে। (৩) মুস্তাহাব ই’তিকাফ। রমযানের শেষ দশক ছাড়া অন্য যে কোন সময় ই’তিকাফ নেওয়া মুস্তাহাব। তবে এ ই’তিকাফের জন্য রোযা শর্ত নয়। (ফাত্ওয়ায়ে শামী, জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্)।

ওয়াজিব ই’তিকাফ কমপক্ষে এক দিন নিতে হয়। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ ই’তিকাফ দশ দিনের কমে হয় না। অবশ্য ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে ভিন্ন কথা। আর মুস্তাহাব ই’তিকাফের জন্য সময় নির্দিষ্ট নেই। এক মিনিট কালও ই’তিকাফ নেওয়া যায়। (বেহেশ্তী যেওর)।
মাহে রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ নিতে হলে ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছবে এবং ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর বের হবে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্)।

ই’তিকাফ অবস্থায় দুই ধরনের কাজ নিষিদ্ধ। এক. শারীরিক প্রয়োজন যেমন পেশাব-পায়খানা ও জানাবতের গোসল এবং শরীয়তের প্রয়োজন যেমন জুম্আ আদায়ের জন্য জামে মসজিদে গমন ছাড়া ই’তিকাফের স্থান ত্যাগ করা। দুই. স্ত্রী সঙ্গম তা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। উপরোক্ত নিষিদ্ধ কাজ করলে ই’তিকাফ আর থাকে না। কোন কারণে ই’তিকাফ ভঙ্গ হলে তার ক্বাযা দিবে। রমযানের ই’তিকাফের ক্বাযা দিতে হলে রমযানের মাস আবশ্যক নয়, তবে রোযা রাখা আবশ্যক। মুস্তাহাব ই’তিকাফের ক্বাযা দিতে হয় না। ই’তিকাফ অবস্থায় যৌন উন্মাদনায় বির্যপাত হলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয় না। (হিদায়াহ্, বেহেশ্তী যেওর)।

শারীরিক বা শরীয়তের প্রয়োজন পূরণ হওয়া মাত্র মসজিদে প্রবেশ করবে। নিকটবর্তী স্থানে প্রয়োজন সেরে নিবে। খাদ্য আনার জন্য কেউ না থাকলে নিজে গিয়ে ঘর থেকে খাদ্য নিয়ে আসতে পারে। তবে অধিক সময় বিলম্ব করবে না। জুম্আর গোসল বা শরীর শীতল করার মানসে গোসল করার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া ই’তিকাফকারীর জন্য জায়েয নেই। বের হলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হবে। হ্যাঁ, যদি গোসল না করলে শারীরিক অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে পড়ে, তখন পায়খানা-পেশাবের জরুরত সেরে আসার পথে বিলম্ব না করে শুধু শরীর শীতল করার মানসে গোসল করা যেতে পারে। (আহ্সানুল ফাত্ওয়া)। তবে ফরয গোসল ও ওযূ করার জন্য বের হতে পারে। মসজিদের ভিতর ওযূ-গোসলের ব্যবস্থা থাকলে বের হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন ওযূ ও গোসলের পানি মসজিদের ভিতরে না পড়ে। আযান দেওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয আছে। (ফাত্ওয়ায়ে শামী)।

উপরোক্ত শরীয়ত ও শারীরিক প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অল্প সময়ের জন্যও মসজিদ থেকে বের হলে ইমাম আবু হানিফা (রাহ্.)এর মতে ই’তিকাফ ভঙ্গ হবে। (হিদায়াহ্, র্দুরে মুখতার)। কোন মুমুর্ষ রোগীর সাথে সাক্ষাত বা পানিতে ডুবন্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য কিংবা আগুন নির্বাপণের জন্য অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে বের হলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হবে। তবে শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন পূরণে বের হলে চলার পথে রোগীর সাথে দেখা বা জানাযায় শামিল হওয়া জায়েয আছে। ই’তিকাফ ভঙ্গ হবে না। (বেহেশ্তী যেওর)। মসজিদে হুক্কা বা বিড়ি সিগারেট পান করা জায়েয নেই এবং ই’তিকাফ গ্রহণকারী এই উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বেরও হবে না। ই’তিকাফকারীর জন্য উচিত যে, তারা যেন ই’তিকাফ কালে হলেও এ অভ্যাস পরিত্যাগ করে। (কিফায়াতুল মুফ্তী)।

ই’তিকাফকালে পরনিন্দা, মিথ্যা, অপবাদ এবং অনর্থক কথাবার্তা ও গল্পগুজব হতে বিরত থাকবে। কারণ, ই’তিকাফের সময়টি বড় মূল্যবান। ই’তিকাফ গ্রহণকারী আল্লাহ্র ঘরের মেহমান। তারা ফেরেশ্তাগণের মতই। ফেরেশ্তাগণ যেমন সর্বদা আল্লাহ্র তাসবীহ্-তাহ্লীলে রত থাকে, তারাও সেভাবে সময় অতিবাহিত করে। কুরআন তিলাওয়াত, দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল ও অন্যান্য যিক্রে ব্যস্ত থাকবে অথবা ওয়ায-নসীহত ও দ্বীনী ইল্ম চর্চায় রত থাকবে। ই’তিকাফের জন্য কোন বিশেষ ইবাদত নির্দিষ্ট নেই।

জরুরী হিদায়াতঃ ই’তিকাফ কালে মসজিদের আদব ও হুরমতের লেহায রাখতে হবে। মসজিদের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল অনেক। এ বিষয়ের কিতাব দেখে কিংবা অভিজ্ঞ আলেমের নিকট হতে জরুরী আদব সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া উচিত। প্রধান আদব হল, মসজিদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি রাখা। যেন খাওয়া, পান করা ইত্যাদিতে মসজিদ ময়লা না হয়। কারণ, মসজিদ আল্লাহ্র ঘর, বেহেশ্তের বাগান এবং আখেরাতের বাজার। যে কোন অপরিচ্ছন্নতায় মসজিদে ফেরেশ্তা-গণের দারুণ কষ্ট হয়। দ্বিতীয় আদব হল, বাজে গল্পগুজব ও অনর্থক কথাবার্তা হতে দূরে থাকা।

সাধারণতঃ অনেকে এ ব্যাপারে অসতর্ক থাকে এবং গোল বৈঠকে বাজে গল্পগুজবে সময় নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, এমন এক যুগ আসবে যখন লোকেরা মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তায় লিপ্ত হবে। তোমাদের কর্তব্য তাদের পাশে না বসা। এ শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্ক নেই। (মিশ্কাত শরীফ, শুআবুল ঈমান)। প্রসিদ্ধ ফাত্হুল ক্বাদীর গ্রন্থে লেখা আছে, মসজিদে দুনিয়াবী মুবাহ্ (অনর্থক কথা) নেক আমলকে এরূপ নষ্ট করে যেরূপ আগুন কাঠকে ভষ্ম করে। সুতরাং মসজিদে তদুপরি ই’তিকাফে বসে বাজে কথাবার্তা ত্যাগ করতঃ যতটুকু সম্ভব ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকা আবশ্যক।

লেখকঃ প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ, গ্রন্থ লেখক, জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও মুরুব্বী এবং সহযোগী পরিচালক ও মুহাদ্দিস- জামিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কুরবানীর মাসআলাহ্ সমূহ

কুরবানীর মাসায়েল 

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
নেসাবের মেয়াদ
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
কুরবানীর সময়
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫
নাবালেগের কুরবানী
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
মুসাফিরের জন্য কুরবানী
মাসআলা : ৫.  যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
কুরবানী করতে না পারলে
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ১০.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২.  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
নর ও মাদা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
কুরবানীর পশুর বয়সসীমা
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬
এক পশুতে শরীকের সংখ্যা
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
সাত শরীকের কুরবানী
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
কুরবানীর উত্তম পশু
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
খোড়া পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮
যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে
মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭
কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
অন্ধ পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭
গর্ভবতী পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫
বন্ধ্যা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪
জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪
কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১
কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩
মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২
কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০
কুরবানীর গোশত বণ্টন
মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
গোশত, চর্বি বিক্রি করা
মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া
মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
জবাইয়ের অস্ত্র
মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা
মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু
নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
অন্য পশুর সামনে জবাই করা
মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।
কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া
মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে
মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।
কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে
মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
পাগল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২
নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া
মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
ঋণ করে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯
কোন দিন কুরবানী করা উত্তম
মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী
মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩
জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী
মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা
মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।
কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে
মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা
মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত
মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪
কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে
মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯
কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া
মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯
কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা
মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩
কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি 
মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ৬৮.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০
কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো
মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫
মোরগ কুরবানী করা  
মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০ ষ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট গুলো দেখুন, আর মন দিয়ে পড়ুন৷ আমার জানা মতে ক্ষতি হবেনা আপনার৷ ইশা-আল্ল-হ৷

বাংলাদেশে হাবশী শাসক

আমাদের এই দেশ একসময় সুদূর আফ্রিকা থেকে আগত হাবশীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে হাবশী কারা? 'হাবশা' বলতে মূলত ইথ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ দেখুন