ইসলামী লেখা লিখতে চেষ্টা করি, আপনাদের কাছে দোয়া চাই, যেনো সারাটা জীবন, ইসলামের পদতলে থাকতে পারি৷
আমীন৷
ব্লগটির সত্যাধিকারিঃ
হাফেজ মোহাম্মাদ হামিদুর রহমান৷
বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি, পার্বত্য বান্দরবান, বাংলাদেশ, দক্ষ্যিন মহা এশিয়া৷
বিঃদ্রঃআমি ইসলামী ব্লগার৷
আমাদের এই দেশ একসময় সুদূর আফ্রিকা থেকে আগত হাবশীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে হাবশী কারা? 'হাবশা' বলতে মূলত ইথিওপিয়া (আবিসিনিয়া) ও ইরিত্রিয়া দেশ দুইটিকে বোঝায় এবং এই হাবশা অঞ্চলের অধিবাসীদেরকেই আমরা চিনি হাবশি নামে। জলদস্যুরা আবিসিনিয়া সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য হাবশি পুরুষকে ধরে এনে দাস হিসেবে বিক্রি করতো বিভিন্ন অঞ্চলে। এই হতভাগ্য হাবশিরা বিভিন্ন স্থানে দাস হিসেবে কাজ করতো এবং তারা বিভিন্ন মুসলিম রাজাদের সেনাবাহিনীতে সৈনিক (স্লেভ সোলজার) হিসেবেও যোগদান করতেন। এভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে হাবশি কৃতদাসেরা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে স্বীয় পারদর্শিতা বলে সেনাপতির মতো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হতেন এবং ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারতেন। এভাবে হাবশিরা সৈনিক ও প্রশাসক হিসেবে নিজেদেরকে একটি 'এলিট ক্লাস' হিসেবে পরিচিত করে তোলেন এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য খ্যাতিমান ছিলেন। এই হাবশিরাই হয়ে উঠেছিলো বাংলার ইতিহাসের অংশ।
১৪৩৩ সালে গণেশ পরিবারের (House of Raja Ganesha) সুলতান জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শামসউদ্দিন আহমাদ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি বাবার ন্যায় যোগ্যতাবান সুশাসক ছিলেন এবং তিনি বাবার মতোই হিন্দু-বৌদ্ধদের প্রতি সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি মাত্র তিন বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। ১৪৩৬ সালে তিনি তাঁর দুই বিপথগামী শক্তিশালী দাস কর্তৃক শহীদ হন। তাঁর দুই ঘাতককে সাম্রাজ্যের আমির-ওমরাহগণ কর্তৃক হত্যা করা হয় এবং ইলিয়াস শাহী রাজবংশ পুনরায় ১৪৩৬ সালে বাংলার ক্ষমতায় আসে। ইলিয়াস শাহী বংশধর নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ সিংহাসনে বসেন।
রাজা গণেশ এবং তার পরিবারের রাজত্বকালে ইলিয়াস শাহী রাজপরিবারের সদস্যগণ রাজধানী থেকে দূরে দক্ষিণ বঙ্গে নির্বাসিত ছিলেন। ১৪৩৬ সালে ইলিয়াস শাহী বংশধর নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ ক্ষমতায় বসেন। এরপর ক্ষমতায় বসেন তাঁর পুত্র রুকনুদ্দিন বারবাক শাহ্। তিনি অত্যন্ত প্রতাপশালী ও সুশাসক ছিলেন। কিন্তু বারবাক শাহ্ একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ইলিয়াস শাহী বংশের ক্ষমতা কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় পাইকদের উপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে আবিসিনিয়া থেকে ৮০০০ দক্ষ হাবশি দাসকে বাংলায় নিয়ে আসেন। কারণ, তিনি জানেন পূর্বে তাঁর পূর্ব-পুরুষরা স্থানীয় অভিজাত হিন্দুদের সুবিধা দিয়ে চরম ভুল করে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। তাই তিনি ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য হাবশিদের নিয়ে এসে পরম যত্নে তাদের নিয়ে নিজের একটি এলিট বাহিনী তৈরি করে ফেলে।
এভাবে ধীরে ধীরে হাবশিদের ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটতে থাকে এবং জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন প্রশাসনের প্রতিটি স্তর চলে গেছে হাবশিদের নিয়ন্ত্রণে। জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ্ অবস্থা বেগতিক বুঝে হাবশিদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করতে লাগলেন। ১৪৮৭ সালের এক সন্ধ্যায় প্রাসাদ রক্ষীদের অধিনায়ক শাহজাদা বারবক নামক এক খোজার নেতৃত্বে হাবশিরা বিদ্রোহ করে ও সুলতানকে হত্যা করে। এভাবেই চিরতরে বাংলার ক্ষমতা থেকে উৎখাত ঘটে ইলিয়াস শাহী বংশের। সিংহাসনে বসে শাহজাদা বারবাক নামের সেই হাবশি খোজা। সে 'সুলতান শাহজাদা' হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে সিংহাসন দখল করে। কিন্তু সুলতান শাহজাদা বারবাক খোজা হওয়ায় অভিজাতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং কয়েকমাস রাজত্ব করার পর ১৪৮৭ সালেই মালিক আন্দিল নামের এক সেনাপতি তাঁকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন ও সাইফ-উদ-দীন ফিরোজ শাহ নামধারণ করে সিংহাসনে বসেন। তিনিই হাবশি সুলতানদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা যোগ্য ছিলেন। তিনি রাজধানী গৌড়ে 'ফিরোজ মিনার' নির্মাণ করেন। তিনিও ঘাতক কর্তৃক নিহত হন এবং এরপর হাবাশ খান নামক এক শক্তিশালী হাবশি অভিজাতের সমর্থনে ক্ষমতায় বসেন কুতুবউদ্দিন মাহমুদ শাহ্।
হাবশি শাসনের পুরোটা সময় জুড়েই এভাবে এক হাবশি কর্তৃক আরেক হাবশিকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল, প্রাসাদ চক্রান্ত চলতে থাকায় চরম অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন আরেক হাবশি অভিজাত শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ্। এভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বাংলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে হাবশি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে এবং হাবশি শাসন বন্ধের দাবিতে ১৪৯৩ সালে ক্রুব্ধ জনতা, সৈনিক ও সাম্রাজ্যের অভিজাত সম্প্রদায় রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করেন। এই বিদ্রোহের পেছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহেরই প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ হোসেন। বিদ্রোহীরা শেষ হাবশি সুলতান শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ্কে হত্যা করেন এবং সফল বিদ্রোহের মূলনায়ক সৈয়দ হোসেনকে সিংহাসনে বসান।
সৈয়দ হোসেন "আলাউদ্দিন হোসেন শাহ" নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন ও হোসেন শাহী বংশের শাসনের সূচনা করেন। ১৪৯৪ সালে দীর্ঘ ছয় বছরের (১৪৮৭-১৪৯৩) হাবশি দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার ক্ষমতায় বসেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্। তিনি ৬ বছরের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভেঙে পড়া সাম্রাজ্যকে আবার গৌরবময় অতীতে ফিরিয়ে আনায় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। তিনি হাবশিদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেন এবং প্রশাসনকে হাবশি প্রভাবমুক্ত করে স্থানীয় মানুষ ও আরব, তুর্কি পাঠান বংশোদ্ভুত ব্যক্তিদের প্রশাসনিক পদে নিযুক্তি দেন। এভাবে হাবশি দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার গৌরব পুন:প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের অবদান সত্যিই অনন্য।
সৌজন্যেঃ- বাইশারী আল-হেরা তাহফীজুল কুরআন আবেদীয়া মাদরাসা ও এতিমখানা ৷ যোগাযোগঃ-01810111919/01575406346
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
একজন অকুতোভয় স্কটিশ যোদ্ধা, যিনি ওসমানীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, এবং শাহাদাতের সুধা পান করেছেন।
টমাস কিথ, জন্ম ১৭৯৩, স্কটল্যান্ড। তিনি প্রথম জীবনে ব্রিটিশদের পক্ষে মিশর দখলের অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও পরাজয়ের পরে, টমাস কিথ ওসমানীয়দের হাতে যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক হয়।
টমাস কিথের রনকৌশল এবং আরবী ভাষার ওপর দক্ষতা তাকে দ্রুতই মিশরে সুপরিচিত করে তোলে। মিশরে এসে টমাস কিথ ইসলাম দ্বারা আকৃষ্ট হন।
ইসলামের সুন্দর ইবাদত পদ্ধতি, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন মাধ্যম ছাড়াই সম্পর্ক, এবং মুসলমানদের উত্তম চরিত্র তাকে অভিভূত করে।
টমাস কিথ পরবর্তীতে ইসলামের সুশীতল ছায়ার আশ্রয় নেন এবং, তাঁর নতুন নাম হয় ইব্রাহীম আগা। তাঁকে নতুন সমরনায়ক হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
নতুন সমরনায়ক হিসাবে তিনি পবিত্র মদীনা শহর ও পবিত্র রওজা মুবারক এর প্রতিরক্ষার কার্যক্রম শুরু করেন। ওসমানীয়রা ওই সময়ে পবিত্র মদীনা নগরীতে বিদ্রোহ মোকাবিলা করছিলো।
পবিত্র মদীনা নগরীতে ও ১৮১৫ সালে সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে, টমাস কিথ (ইব্রাহিম আগা) সাফল্যের সাথে বিদ্রোহ দমন করেন; এর ফলশ্রুতিতে তাকে মদীনা শরীফের গভর্নর নিয়োগ করা হয়।
দূর্ভাগ্যবশত, এর কয়েকমাসের মধ্যে মাত্র ২৩ বছর বয়সে, ইব্রাহীম আগা চোরাগোপ্তা হামলায় শাহাদাত বরণ করেন।
সৌজন্যেঃ- বাইশারী আল-হেরা তাহফীজুল কুরআন আবেদীয়া মাদরাসা ও এতিমখানা ৷ যোগাযোগঃ-01810111919/01575406346
আল-হেরা তাহফিজুল কুরআন আবেদীয়া নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানার পক্ষ থেকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ গ্রহণ করবেন ৷
আবাসিক/অনাবাসিক, নাজেরা, হিফজ ও দাওর বিভাগ, গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও মৌলিক দোয়া, হিফজের পাশাপাশি আরবি, উর্দু, ফার্সি, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পাঠদান করা হয়৷
স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ডে-কেয়ার, (মক্তব) নামাজ শিক্ষাসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়াদির শিক্ষা প্রদান করা হয়৷
এতিমদের জন্য সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রয়োজনেঃ01810111919
দক্ষিন বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি, পার্বত্য বান্দরবান৷
বাইশারী ও পার্শবর্তী এলাকার জন্য ৷
সৌজন্যেঃ- বাইশারী আল-হেরা তাহফীজুল কুরআন আবেদীয়া মাদরাসা ও এতিমখানা ৷ যোগাযোগঃ-01810111919/01575406346
১৯ আগস্ট ২০২১ আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী রহ.এর ইন্তেকালে বাইশারী ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া কল্যণ পরিষদ শোক জ্ঞাপন করছে।
আজ দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। জীবদ্দশায় তিনি দেশের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম হাটহাজারীর শায়খুল হাদীস ও উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুহতারাম কেন্দ্রীয় আমীর হিসেবে জাতির অভিভাবকত্ব করেছেন। তাঁর ইন্তেকালে জাতির অভিভাবক শূন্যতা আরো প্রকট হলো। এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণিয় নয়।
২০১৩ সালে যখন মুসলিম জাতি চরম অভিভাবকহীনতায় ছিলো, তখন তাঁর আবির্ভাব ছিল জাতির রহমতস্বরূপ। এরপর চরম উত্তাল সময়েও জাতির হাল ধরে রেখেছিলেন শক্ত হাতে। আজ জাতি সেই কান্ডারিকে হারালো।
প্রচন্ড কারানির্যাতনেও তিনি হাল ছাড়েননি। রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের পরও তিনি স্বীয় অবস্থানে থেকেছেন স্ব-মহিমায়। যা আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
এছাড়াও তিনি হাদীসে নববীর অন্যতম শীর্ষ মুহাদ্দিস ছিলেন। হাদীসের উপর বিশেষায়িত গবেষণা বিভাগ তিনিই বাংলাদেশে প্রথম চালু করেন।
মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমাদেরকেও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমীন।
সৌজন্যেঃ- বাইশারী আল-হেরা তাহফীজুল কুরআন আবেদীয়া মাদরাসা ও এতিমখানা ৷ যোগাযোগঃ-01810111919/01575406346
রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এছাড়া শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজত। হেফাজতের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এ কর্মসূচি দেন। শুক্রবার সন্ধ্যা্য় পল্টনে ঢাকা মহারগর হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক তার পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম, হাটহাজারীসহ সারা দেশে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা ও ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হোক।’ তিনি দাবি করেন, হেফাজতের মোট ৫ জন কর্মী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন হাটহাজারীতে এবং একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এ কর্মসূচি সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না। এটি ছিল নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। মোদি সে দেশে মুসলিমদের নির্যাতন করছেন। এর প্রতিবাদ স্বরূপ এ কর্মসূচি দিয়েছিলাম।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি চলছে.. বিভাগ সমূহ,
নাযেরা,নূরানী, তাস্ মী,হিফয ও মোসাবাকা।
আবাসিক অনাবাসিক ডে-কেয়ার।
মাদ্রাসার বৈশিষ্ট্য সমূহ…..
দক্ষ শিক্ষক দ্বারা হিফজুল কুরআন ব্যবস্হা,দেশি ও বিদেশী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনের সুবিধা, ছাত্র এবং শিক্ষককে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গড়ে তোলা। অভিজ্ঞ ক্বারীদের মাধ্যমে মশ্ক করার সুবিধা, প্রবাসী ও ব্যস্ত অভিভাবকগনের সন্তানদের পরিপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ, নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্হা, কোলাহলমুক্ত মনোরম ও শিশু বান্ধব পরিবেশ শিক্ষা প্রধান, নূরানী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও অভিঙ্গ শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা পাঠদান, ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষার চমৎকার সমন্বয়, শ্রেণী ভিত্তিক সাপ্তাহিক ও মাসিক মূল্যায়ন পরিক্ষা ব্যবস্হা, আরব দেশের বিভিন্ন সুর, লাহান, তর্জ,ও হাদার,অভিভাবক সমাবেশ ও বার্ষিক শিক্ষা সফর, ওয়াশিং মেশিনে ছাত্রদের কাপড় ধোঁয়া ও আয়রণের ব্যবস্হা, হিফয সমাপ্তকারীদের ১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ব্যবস্হা।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পাঠদান পরিচালক,
হযরত মাওঃ ক্বারী ইদ্রিস
৩০ বছরের অভিজ্ঞ ও রামু চাকমারকুল মাদ্রাসার সাবেক বিভাগীয় প্রধান।
যোগাযোগ, ০১৮৩৫.১৪২৪৮০/০১৮৫৭.৩৫৫৯১৭
প্রাচীন ব্যবিলনের জাদুবিদ্যা: ফেরেশতা হারুত-মারুতের আখ্যান
https://www.facebook.com/www.hmhamid.com.bd প্রায় ৩৭০০ বছর আগের এক ব্যবিলনীয় গণিত ফলকসংরক্ষিত রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। এটি থেকে গবেষকরা জানতে পারেন, সেই তখনই ব্যবিলনবাসীরা আধুনিক ত্রিকোণমিতি সম্বন্ধে জানতো। তারা বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথও হিসেব করছিল সে যুগেই। এ তো গেল প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। প্রত্নতত্ত্ব থেকে বহু দূরে যদি ঘুরে আসা যায়, তাহলে পাওয়া যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অধ্যায়। এক জাদুকরী যুগ। যার দেখা প্রত্নতত্ত্বে মেলে না। মেলে বরং ইসলাম, ইহুদি আর পারসিক ধর্মগ্রন্থের পাতায়।
কথা হচ্ছিল জাদুবিদ্যা নিয়ে। আর জাদু বলতে মোটেও ক্রিস অ্যাঞ্জেল কিংবা ডেভিড কপারফিল্ডের স্টেজ শো কিংবা হাতসাফাইয়ের কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে এমন জাদুর কথা যার অস্তিত্ব বিজ্ঞান অস্বীকার করে, কারণ প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরের এমন কিছু বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার অতীত। কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে নেই এমন বাঁধন বা সীমাবদ্ধতা। পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো বিশেষ করে সেমেটিক ধর্মগুলোতে যে জাদুর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর অতীত ঘাঁটতে গেলে শুরুর মুহূর্তটা গিয়ে ঠেকে প্রাচীন ব্যবিলনে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার (ইরাক) ফোরাত নদীর তীরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া উন্নত এক শহর ব্যবিলন। আর সেই সাথে চলে আসে দুজন ফেরেশতার নাম- হারুত আর মারুত।
ব্যবিলন (Babylon) পরিচিত নানা নামে, নানা কারণেও- যার মাঝে সবচেয়ে সুপরিচিত ব্যবিলনের শুন্য উদ্যান আর বাইবেলের পাতায় পাওয়া টাওয়ার অফ বাবেল। ব্যবিলনের নানা উচ্চারণের মাঝে আছে 'বাবেল', যা একইসাথে আরবি (بَابِل), হিব্রু (בָּבֶל) ও আরামায়িক (בבל) উচ্চারণ। আক্কাডিয়ান ভাষায় ডাকা হত বাবিলি।
এ লেখায় আমরা ব্যবিলনের ইতিহাস নিয়ে কথা বলব না, বরং ব্যবিলনের সাথে জাদুবিদ্যার সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে। আর এর শুরুটা পাওয়া যায় খোদ কুরআনের আয়াতেই। সুরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে-
তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফরি করেননি; শয়তানরাই কুফরি করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই এ কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, 'আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।' অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। তারা তাই শিখে যা তাদের ক্ষতি করে এবং কোনো উপকার করে না। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদুবিদ্যা চর্চা করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ- যদি তারা জানত!" (কুরআন, বাকারা, ২:১০২)
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে, এখানে বাবেল অর্থাৎ ব্যবিলন শহরের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে হারুত (هَـارُوت) ও মারুত (مَـارُوت) নামের দুই ফেরেশতার কথা আছে, যাদের উপর কিছু একটা অবতীর্ণ হয়েছিল যা কিনা 'তারা' অর্থাৎ অসৎ বা খারাপ লোকেরা 'শিক্ষা দিত'। একই বাক্যাংশে বলা হয়েছে তারা জাদুবিদ্যাই শিক্ষা দিত। তারা সেটা শিখেছিল হারুত-মারুতের কাছ থেকেই; কিন্তু এটাও বলা হয়েছে, এই দুজন ফেরেশতা এ শাস্ত্র শেখাতেন বটে, কিন্তু সাথে এটাও তারা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে বলে দিতেন, "আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।'" কিন্তু এই পরীক্ষামূলক বিদ্যা গ্রহণ করে তারা অসৎ কাজে ব্যবহার করতে শুরু করল, যার মাঝে আছে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ, ইত্যাদি। শেষে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে, যারা এই জাদুবিদ্যা ব্যবহার করে, তাদের জন্য পরকালে কিছুই নেই, তারা নিজেকে বিক্রয় করেছে, এতে তার অপকার বৈ কিছু হবে না।
কিন্তু এ আয়াতের সাথে সুলাইমান (আঃ) বা কিং সলোমনের কী সম্পর্ক? সেটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ইহুদি জাতির ইতিহাসের সুলাইমান (আঃ) অধ্যায়ের বিশদ আলোচনায়, যেটা অবশ্য এ লেখার বিষয় নয়। ইবনে কাসিরের তাফসিরে উল্লেখিত ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিশেষ এক ঘটনার পর সুলাইমান (আ)-কে জাদুকর অপবাদ দেওয়া হয়, এবং তার সিংহাসনের নিচ থেকে অন্যের লুকোনো জাদুবিদ্যার বই উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, সেগুলো সেই প্রাচীন বাবেলের জাদুবিদ্যার বই। কুরআনে সেই অপবাদ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুলাইমান (আঃ) এ কুফরি কালাম বা জাদুবিদ্যা বা ডার্ক আর্টস আদৌ ব্যবহার করেননি, বরং সেসব 'আবৃত্তি' বা মন্ত্রপাঠ করত শয়তানেরা।
সুলাইমান (আঃ) সে বইগুলো পরে পুঁতে ফেলেন, আর সে বইগুলো নিয়ে যেকোনো কথা বলা নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেগুলো খুঁড়ে বের করা হয়, এবং রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলো। এখনো তাবিজ-কবচ এমনকি 'জাদুবিদ্যার' বইতে অনেক সময় সুলেমানি জাদু কথাটি উল্লেখ করা হয় বা নাম দেওয়া হয়। ১০২ নং আয়াতটি সে অপবাদের বিরুদ্ধেই অবতীর্ণ হয় বলে তাফসিরে জানা যায়।
কিন্তু কথা হলো, এই হারুত আর মারুত ফেরেশতা কারা? কুরআনে কেবল তাদের নামখানাই বলা হয়েছে, বিস্তারিত উল্লেখ হয়নি। বিস্তারিত জানবার আগ্রহ থাকলে আমাদের চোখ ফেরাতে হবে তাফসিরে, এবং ফেরেশতাদের উল্লেখ থাকা ইহুদি ও পারসিক ধর্মের দিকে।
তাফসির থেকে আমরা জানতে পারি, ইবনে জারির (র) এর মতে, হারুত ও মারুত ফেরেশতা দুজনকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠান বান্দাদের পরীক্ষা করবার জন্য। এজন্য তিনি তাদের জাদুবিদ্যা শেখাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। তারা আল্লাহর আদেশ পালন করেছিলেন। কথিত আছে, সেটা ইদ্রিস (আঃ) এর সময়কাল ছিল।
ইসলামি তাফসিরে বলা হয়েছে, হারুত ও মারুত ফেরশতাদের কাহিনী নিয়ে নিশ্চিত কোনো বর্ণনাই কুরআন তো দূরের কথা, সহিহ হাদিসেও নেই। তাই এই কাহিনীগুলোতে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করা বিষয়ে সতর্কবাণীর উল্লেখ আছে। তবে ইবনে কাসির সেই যুগে এই তাফসির লিখতে গিয়ে মন্তব্য করেন, এ ঘটনাগুলো 'হয়তোবা' ইসরায়েলি কাহিনী থেকে এসেছে; কিন্তু সেটা মিলিয়ে দেখবার উপায় হয়তো তার কাছে ছিল না। এখন আমরা মিলিয়ে দেখতে পারি আসলেই এগুলো ইহুদিদের উৎস থেকে এসেছে কিনা।
হ্যাঁ, আসলেই এসেছে। আমরা ইহুদিদের তালমুদ আর মিদ্রাশ ইয়ালকুত উল্টিয়ে হারুত আর মারুতের কাহিনী দেখতে পাই, যা বিভিন্ন দুর্বল হাদিসেও এসেছে। চলুন জেনে আসি কাহিনীটা কী। এ ব্যাপারে আমরা সেই ইহুদি উপকথা তাফসিরে ইবনে কাসিরের লেখনিতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তার বিভিন্ন সংস্করণ সংক্ষেপে তুলে ধরব।
যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং তার সন্তানেরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা নাফরমানি করতে থাকে আল্লাহর। ফেরেশতারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, "দেখ এরা কত দুষ্ট প্রজাতি! কত অবাধ্য! আমরা এদের জায়গায় থাকলে কখনোই অবাধ্য হতাম না।"
তখন আল্লাহ তাদের বলেন, "তোমরা তোমাদের মাঝ থেকে দুজন ফেরেশতাকে বাছাই কর। আমি তাদের মাঝে মানবীয় প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখা যাক এরপর তারা কী করে।"
তারা তখন হারুত আর মারুতকে হাজির করলেন। আল্লাহ তাদের বললেন, "দেখো, মানুষকে তো আমি নবীর মাধ্যমে বাণী পাঠাই, কিন্তু তোমাদের সরাসরিই বলে দিচ্ছি- আমার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না উপাস্য হিসেবে, কখনো ব্যভিচার করবে না আর মদপান করবে না।"
তারা দুজন তখন পৃথিবীতে অবতরণ করলেন। তাদের কাজ ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা জনগণের সমস্যার সমাধান করা, বিচার-ফয়সালা করা ইত্যাদি। সন্ধ্যা হলে তারা আবার আকাশে ফেরত যেতেন, এবং সে কাজে তারা ব্যবহার করতেন ইসমে আজম- স্রষ্টার যে পবিত্র নাম উচ্চারণ করার পর যেকোনো অসাধ্য আকাঙ্ক্ষা সাধন করা যায়। ইসমে আজম ব্যবহারের কারণ ছিল, ফেরেশতাদের সাধারণ ক্ষমতাগুলো তাদের ছিল না তখন।
একবার জোহরা নামের এক নারী হাজির হলো তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিচার চাইতে। অসম্ভব সুন্দরী সে নারীকে দেখে তারা বিমোহিত হয়। তারা তার সাথে ব্যভিচার করবার ইচ্ছে প্রকাশ করে [তাফসিরে ইবনে কাসিরের (তাফসির পাবলিকেশন কমিটি প্রকাশনী, ড.মুহম্মদ মুজীবুর রহমান অনূদিত) বাংলা অনুবাদ প্রথম খণ্ডের ৩৩৮ পৃষ্ঠায় সেটিই উল্লেখ আছে, সাথে স্ক্রিনশটজুড়ে দেওয়া হলো]। কিন্তু জোহরা অস্বীকার করে বসে, কারণ হারুত বা মারুত জোহরার দেব-দেবী মানেন না। জোহরা জানায়, যদি তারা জোহরার মতো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মেনে নেয় উপাস্য হিসেবে তবেই সে মিলিত হবে (অর্থাৎ যদি 'শিরক' করে)।
হারুত মারুত জানালেন, "এটা আমাদের দ্বারা হবে না।" এটা শুনে জোহরা চলে গেল।
পরের বার জোহরা এক শিশুকে নিয়ে এসে বলল, "তোমরা যদি এ শিশুকে হত্যা করে দেখাতে পারো তাহলে বুঝব তোমরা আসলেই আমাকে চাও। আমি তোমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করব।" শিশুহত্যার তো প্রশ্নই আসে না, তাই তারা সেটাও প্রত্যাখ্যান করলেন।
এরপরের বার জোহরা এলো মদ নিয়ে। বলল, "আচ্ছা, এ মদ তো পান করো।"
হারুত মারুত মনে করলেন, এ তো অল্প পাপ। তারা মদ পান করে নিলেন। বেশি পরিমাণেই পান করলেন। হুঁশ হলে তারা আবিষ্কার করলেন, তারা মদের নেশায় ব্যভিচার তো করেছেনই, সাথে শিশুটিকে হত্যাও করে ফেলেছেন। তারা তখন অনুতপ্ত হয়ে যায়।
তাদেরকে বলা হয়, তারা কি দুনিয়াতেই শাস্তি নিয়ে নেবে, না পরকালের শাস্তি নেবে? তারা দুনিয়ার শাস্তি বাছাই করে নেয় (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৮)। তাদের শাস্তি হয় ব্যবিলনের এক কুয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) এই দুর্বল হাদিস বর্ণনা করেন ইসরায়েলি বর্ণনা থেকে। (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৭)
আবার ইবনে আব্বাস (রা) আরেকটি ইসরায়েলি বর্ণনা জানান এ বিষয়ে। জোহরার (বা যাহরা) নাম ফারসি ভাষায় আনাহীদ। সে স্বামীর বিরুদ্ধে যে বিচার চেয়েছিল সেটি সাথে সাথেই রায় দিয়ে দিয়েছিল ফেরেশতা দু'জন। এরপর জোহরা দাবি করে বসে, "তোমরা যে মন্ত্র পড়ে আকাশে উঠে থাকো আর নিচে নেমে আসো সেটা আমাকে শিখিয়ে দাও।"
মানুষরূপী ফেরেশতা দুজন সেটিও তাকে শিখিয়ে দেয় (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৯)। কিন্তু নিচে নেমে আসবার জন্য নাকি ভিন্ন কিছু বলার কথা ছিল, যেটা জোহরা ভুলে যায়। জোহরা উর্ধ্বে আরোহণ করে নিচে নামতে পারেনি আর। সেখানেই তার দেহকে তারকায় রূপান্তরিত করা হয়। সে তারকাকে শুকতারা নামে চেনে মানুষ। জোহরা তারকা বলা হয়ে আরবিতে। আজকে আমরা জানি সেটা শুক্রগ্রহ।
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, যখন এ ফেরেশতা দু'জনের কাছ থেকে অবাধ্যতা প্রকাশ পায় তখন আকাশের ফেরেশতারা স্বীকার করে নেন, মানবজাতি আল্লাহ থেকে দূরে অবস্থানের কারণে এবং তাকে না দেখেই ঈমান আনবার কারণে, তাদের ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না (ইবনে কাসির, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)।
তাফসির-ই-ইবনে জারিরের মধ্যে একটি দুর্বল হাদিস আছে (ইবনে কাসির, ৩৪০ পৃষ্ঠা থেকে বিস্তারিত পাওয়া যাবে)। আয়েশা (রা) বলেন, মহানবী (সা) মারা যাবার পর এক মেয়ে তার খোঁজে আগমন করে দাওমাতুল জান্দাল থেকে। সে জানত না, নবী (সা) মারা গিয়েছেন। জানামাত্রই সে কাঁদতে শুরু করে। আয়েশা (রা) জিজ্ঞেস কলেন, "কাহিনী কী?"
সে বলে, আমার আর আমার স্বামীর মাঝে ঝগড়া লেগেই থাকত। একবার সে আমাকে ছেড়ে কই যেন চলে যায়। এক বুড়ির কাছে গিয়ে আমি আমার এ কথাগুলো বলি। বুড়ি আমাকে বলে, "তোমাকে যা যা করতে বলি করো, সে আপনা-আপনি চলে আসবে।"
আমি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। রাতের বেলা সে দুটো কুকুর নিয়ে আমার কাছে এলো। একটির উপর সে উঠে বসলো। আর আমি আরেকটির উপর। (বিস্ময়কর ব্যাপার,) কিছুক্ষণের মাঝে আমরা অন্য শহরে পৌঁছে যাই। সেটি বাবেল শহর। আমাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে দুটো লোক শেকলে বাঁধা।
আমাকে বুড়ি বলে, "ওদের কাছে যাও, বল, আমি জাদু শিখতে এসেছি।"
আমি গেলাম, এ কথা বললাম। তারা বলল, "জেনে রেখো, আমরা পরীক্ষার মধ্যে আছি। তুমি জাদু শিক্ষা করো না, এটা কুফরি কাজ।"
আমি বললাম, "শিখব আমি।"
তারা বলল, "ঠিক আছে, তাহলে যাও, ঐ চুল্লীর মধ্যে প্রস্রাব করে চলে এসো।"
আমি গেলাম। প্রস্রাবের ইচ্ছেও করলাম, কিন্তু আমার অন্তরে তখন ভয় সঞ্চার হয়। আমি তাই ফিরে এসে বললাম, "করে আসলাম।"
তারা জিজ্ঞেস করল, "কী দেখলে?"
বললাম, "কিছুই না।"
তারা বলে, "তুমি ভুল বলছো। এখন পর্যন্ত তুমি বিপথে যাওনি। তোমার ঈমান ঠিক আছে, তুমি ফিরে যাও বাসায়, কুফরি করো না।"
আমি বললাম, "আমাকে জাদু শিখতেই হবে।"
তারা আবার বলল, "ঐ জায়গায় প্রস্রাব করে এসো।"
আমি আবার গেলাম। কিন্তু মন চাইলো না। ফিরে এলাম। আবার একই কথোপকথন হলো। এবার আমি আসলেই চুল্লীর কাছে গিয়ে প্রস্রাব করলাম। দেখলাম, এক ঘোড়সওয়ার মুখের উপর পর্দা ফেলে আকাশের উপর উঠে গেল!
আমি ফিরে এসে এ ঘটনা বললাম। তারা বলে, "হ্যাঁ। ঠিক। ওটা তোমার ঈমান ছিল, যা তোমার মধ্য থেকে বেরিয়ে গেল। এখন যাও।"
আমি বুড়ির কাছে ফিরে এলাম, বললাম, "তারা আমাকে কিছুই শেখায়নি।"
বুড়ি বলল, "যথেষ্ট হয়েছে। সবই এখন তোমার মাঝে আছে। তুমি যা বলবে তা-ই হবে।"
আমি পরীক্ষা করবার জন্য একটি গমের দানা নিয়ে মাটিতে ফেলে বললাম, "গাছ হও।" গাছ হয়ে গেল।
এরপরই আমার আফসোস শুরু হলো, আমি বুঝতে পারলাম আমি আসলেই ঈমানবিহীন হয়ে গেছি।
হে উম্মুল মুমিনিন (আয়িশা)! আল্লাহর কসম, আমি জাদু দিয়ে কোনো লাভ নেইনি, কারো উপর প্রয়োগ করিনি! এভাবে কাঁদতে কাঁদতে রাসুল (সা) এর সেবায় হাজির হতে এসেছি। কিন্তু পেলাম না তাকে। কী করি আমি এখন?"
এ কথা বলেই সে কাঁদতে থাকে, এত কাঁদে যে সবার মনে দয়া জাগে। কী ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে সে নিয়ে সাহাবীরা বেশ উদ্বিগ্ন হলেন। তারা বললেন অবশেষে, "এখন এ ছাড়া আর কী বলার আছে- তওবা করবে, ক্ষমা চাইবে আল্লাহর কাছে। আর বাবা-মায়ের সেবা করবে।"
আল-কালবির বিবরণে দেখা যায়, আসলে তিনজন ফেরেশতাকে বাছাই করা হয়েছিল। তারা ছিলেন ফেরেশতা আয, আযাবি এবং আযরাইল (আঃ)। এর মাঝে যখন আযরাইল (আঃ) নিজের মাঝে কামনা অনুভব করেন তখন ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে তুলে নিতে বলেন, তাকে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু বাকি দুজন কামনা চরিতার্থ করেন, তখন আল্লাহ তাদের নাম পরিবর্তন করে হারুত ও মারুত করে দেন যথাক্রমে।
কাতাদার ভাষ্যে জানা যায়, এক মাস লেগেছিল ফেরেশতা দুজনের অবাধ্য হতে। আর অন্য এক বিবরণে শোনা যায়, জোহরা আসলে যেন-তেন মহিলা ছিলেন না, পারস্যের রানী ছিলেন। আরেক ইহুদি বিবরণে জানা যায়, ফেরেশতা দুজনের আগের নাম ছিল শামহাজাই এবং আযাইল। আর জোহরার নাম সেখানে এস্থার। ইহুদি মিদ্রাশের অন্য বিবরণে এও জানা যায়, এস্থার বা জোহরা আসলে ব্যভিচারে জড়িত হয়নি, বরং তার ইচ্ছে ছিল কেবল স্রষ্টার পবিত্র নাম জানা, যেন সে স্রষ্টার নৈকট্য পেতে পারে। সে নাম জপ করবার পর যখন জোহরা স্বর্গারোহণ করল, তখন স্রষ্টা নিজে খুশি হয়ে তাকে কিমাহ নক্ষত্রমালায় স্থান দেন। তৎকালীন আরবে জোহরার শুকতারা হয়ে যাবার কাহিনী প্রচলিত ছিল।
হারুত-মারুতের ঘটনা বংশের পর বংশ ধরে চলে আসে। যাদের হাতে ছিল জাদুর মতো অলৌকিক ক্ষমতা, একটা সময় পর যে তাদেরকে পুজো শুরু করে দিবে তখনকার মানুষ, সে কী আর বলতে! সত্যি সত্যি এক সময় তারা উপাস্যে পরিণত হন; না, এটা কোনো ইহুদি, খ্রিস্টীয় বা ইসলামিক বই থেকে বলা হচ্ছে না, খোদ ইতিহাস থেকে বলা হচ্ছে। যেমন- আরমেনিয়াতেহারুত আর মারুত নামের দুই মূর্তির পুজা করা হতো। তারা ছিল আমিনাবেগ এবং আরারাত পর্বতের দেবী আসপারদারামলতের (Aspandaramlt) দুই উপদেবতা। ইরানেও (অর্থাৎ, পারস্যে) এই দেবীর পুজা হতো। আরমেনীয়রা তাকে দ্রাক্ষাক্ষেতের দেবী মানলেও ইরানে অর্থাৎ পারস্যের জরথুস্ত্রুর ধর্মে আসপারদারামলত আসলে একেবারে পৃথিবীর আত্মা। হোরোত আর মোরোত (হারুত মারুত) তার দুই সহকারী। তারা বাতাস আর বৃষ্টি আনত বলে বিশ্বাস করা হতো। আরারাত পর্বতের চুড়ায় তাদের বাস।
মজার ব্যাপার, আরো ঘাঁটলে আমরা জানতে পারি, জোহরার হিব্রু নাম ইস্থার। যাকে ব্যবিলন আর সিরিয়ায় কামের দেবী এবং জন্মের দেবী হিসেবে উপাসনা করা হতো। গিলগামেশ আর ইস্থারের এক করুণ প্রেমকাহিনী আমরা সেখানে পাই, তবে সে অন্য কথা।
জরথুস্ত্রুর পারসিক ধর্মে আমরা আভেস্তা ভাষায় 'হাওরভাতাত' (Haurvatat) নাম পাই, যার সাথে পানি, উন্নতি আর স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ছিল। হাওরভাতাত নারী না পুরুষ সে বিষয়ে আছে বিতর্ক। তবে তার সাথে গ্রিক ধনের দেবতা প্লুটাসের মিল পাওয়া যায়। আবার আরেকটি নাম পাওয়া যায় যেটি হলো 'আমেরাতাত' (Ameretat)। আমেরাতাতের সাথে জড়িত ছিল ইহকাল আর পরকালের আয়ু আর সমৃদ্ধি।
ভাবছেন এ দুজনের কথা কেন বলছি? ইতিহাস এখানেই শেষ না। ইসলাম আবির্ভাবের প্রায় ৬০০ বছর আগে থেকে ইরানে বা পারস্যের একটি অঞ্চলে সগদিয়ান ভাষায় কথা বলা হতো, বর্তমানে সেটি উজবেকিস্তান আর তাজিকিস্তান, সমরকন্দ যার রাজধানী। সে ভাষায় আমরা দেখতে পাই হাওরভাতাত আর আমেরাতাত এর উচ্চারণ হারুত আর মারুত। হতে কি পারে না তারা একই? হারুত-মারুতের নাম শুধু এ ভাষায় না, বরং ইরানের নানা উপভাষাতেও প্রচলিত হয়ে যায়। এমনকি তারা এক জাতের ফুলের নামও রাখে হারুত-মারুত।
আবু দাউদ শরিফের ৪৯০ নং হাদিসে এসেছে, একবার আলী (রা) বাবেলের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আসরের নামাজের সময় হয়ে গেলেও তিনি সেখানে নামাজ পড়লেন না। একেবারে বাবেল সীমান্ত পার হয়ে যাবার পর নামাজ পড়লেন। এরপর বললেন, "রাসুল (সা) আমাকে কবরস্থানে নামাজ পড়তে মানা করেছেন, আর বাবেলের ভূমিতে নামাজ পড়তে মানা করেছেন। কারণ বাবেল অভিশপ্ত ভূমি (সেই জাদুর কারণে)।"
তবে, 'ফলেন অ্যাঞ্জেল' ধারণা কিংবা ফেরেশতার অবাধ্যতার ধারণা ইসলামে অনুপস্থিত থাকায় এসব ইহুদি উপকথা মিথ্যা বলে মেনে নেন আধুনিককালেরইসলামি আলেমগণ। ইমাম কুরতুবিরও তাই মতামত। কারণ, কুরআন বলছে,
ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তা-ই করে।" (কুরআন, ৬৬:৬) "তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে। (কুরআন, ২১:২৬-২৭)
ইমাম তাবারি আর ইবনে জারির মনে করেন, হারুত মারুত আসলে ফেরেশতা ছিলেন না, মানুষই ছিলেন, তাদেরকে ফেরেশতা মনে করা হতো।
বর্তমানে ইসলামে যে ফতোয়া এ বিষয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি সৌদি ফতোয়া কাউন্সিলের শেখ সালিহ আল ফাওজানের, "হারুত ও মারুত ফেরেশতাই ছিলেন, কিন্তু তারা কখনোই অবাধ্যতা করেননি। তাদের আল্লাহ কেবল পাঠিয়েছিলেন মানুষের পরীক্ষা নেবার জন্য। তারা যে জাদুবিদ্যা শেখাবার কথা বলতেন, সাথে সতর্কবাণীও দিতেন। আল্লাহর হক বান্দাগণ সে সতর্কবাণী মেনে জাদু শিখবে না, কিন্তু নাফরমানি যারা করতে চায় তারা শিখবে। এটা ছিল ছিল সে পরীক্ষা। আর কিছুই নয়।"
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) আকাশে শুকতারা দেখলেই প্রচলিত ইহুদি কাহিনীটি স্মরণ করে অভিশাপ দিতেন বলে ইবনে কাসিরের তাফসিরে উল্লেখ আছে। ইসলামে সরাসরি হারুত আর মারুত নিয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও ইহুদি উপকথার মিশেল সহস্রাব্দেরও বেশি সময় জুড়ে কাহিনীর যোগান দিয়ে এসেছে বটে মুসলিম বিশ্বে। হয়তো পাঠক আপনারাও তেমন কাহিনী শুনে থাকবেন কোনো না কোনো সময়।